The new rice cultivation direction was shown to the farmers of Sundarbans: সুন্দরবনের কৃষকরা, যাঁরা প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টির কারণে ধান চাষে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হন, এবার তাঁরা নতুন ধানের জাতের চাষ করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। বিধানচন্দ্র রায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাকদ্বীপ শাখার গবেষকদের উদ্ভাবিত তিন ধরনের ধান—মালি ৪, জি ৪, এবং উল্কা ৪—এবার সুন্দরবনের শতাধিক বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। এই ধান চাষের ফলাফল দেখে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি।ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুন্দরবনের কৃষকদের চিরকালীন সঙ্গী। প্রতিবছর দুর্যোগের পর ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, জলাবদ্ধতায় গাছের গোড়া পচে যায়, এবং ফলন প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কৃষকদের একমাত্র সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় হতাশা। কিন্তু এ বছর সেই চিত্র বদলে গেছে।
কাকদ্বীপের বিশালাক্ষ্মীপুর আশ্রম মোড়ের কৃষক কালীপদ খাটুয়া বলেন, “এ বছর আমি মালি ৪ চাষ করলাম। খুব ভালো ফলন হয়েছে। ঝড়বৃষ্টিতে একদমই ক্ষতি হয়নি। অগ্রহায়ণ মাসের শেষে ধান কাটা শুরু হবে। আশা করছি, আমার পাঁচ বিঘা জমিতে অন্তত ৪৫ কুইন্টাল ধান পাব।” তাঁর মতো আরও বহু কৃষক একই ধানের চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন।মালি ৪, জি ৪, এবং উল্কা ৪—এই তিনটি ধানের জাত বৃষ্টিপাত ও প্রবল হাওয়া সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন। গবেষকদের মতে, এই ধানগাছের উচ্চতা ৫০ থেকে ৫৫ ইঞ্চি, যা গাছের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলে। প্রবল হাওয়াতেও গাছ সোজা দাঁড়িয়ে থাকে এবং জলাবদ্ধতায় গাছের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। মাজরা পোকার মতো সমস্যা দেখা দিলেও সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সেটি সহজেই সমাধান করা যাপ্রতিটি ধানগাছে ১৫ থেকে ২০টি পাশকাঠি থাকে।প্রতি শিসে ২২০ থেকে ২৫০টি ধান থাকে।বিঘাপ্রতি প্রায় ৯ কুইন্টাল ধান পাওয়া সম্ভব।
এই ধান থেকে পাওয়া চাল খুব মোটা নয়, আবার অতিরিক্ত সরুও নয়।বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাকদ্বীপ শাখার গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অরুণকুমার সেনাপতি বলেন, “সুন্দরবন অঞ্চলের নিচু জমির জন্য এই ধান অত্যন্ত উপযোগী। এই ধানের ফলন দেখে আশা করা যায়, আগামী বছর আরও বেশি সংখ্যক কৃষক এই ধানের চাষ করবেন এবং সফল হবেন।”
এই নতুন ধানের জাত শুধুমাত্র ফলন বাড়াচ্ছে না, বরং কৃষকদের আস্থা বাড়িয়ে তুলছে। অরুণকুমার সেনাপতির মতে, “এই গবেষণা কেবলমাত্র কৃষিক্ষেত্র নয়, সামগ্রিকভাবে সুন্দরবনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”সুন্দরবনের বেশিরভাগ কৃষক ক্ষুদ্র জমিতে চাষ করেন এবং তাঁদের আয়ের প্রধান উৎস ধান চাষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। নতুন ধানের এই সাফল্য তাঁদের জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় কৃষক সুমন মণ্ডল বলেন, “আগে আমাদের ফসল বারবার ঝড়বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এ বছর ফলন দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের সারা বছরের পরিশ্রম সার্থক হবে। নতুন ধানের এই জাত আমাদের মতো ছোট কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ।”এই নতুন ধান শুধুমাত্র কৃষকদের জীবনে পরিবর্তন আনছে না, বরং স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ এবং মূল্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।এই ধানের সাফল্য যদি দীর্ঘমেয়াদে প্রমাণিত হয়, তবে সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে কৃষিক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটবে। সরকার ও গবেষণা সংস্থাগুলি এই ধানের সম্প্রসারণে উদ্যোগী হলে স্থানীয় কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হবে।