Sunday, October 12, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশআন্দোলনে উত্তাল pok!

আন্দোলনে উত্তাল pok!

The movement is raging! : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস বরাবরই সংঘাত ও উত্তেজনার। সীমান্তের ওপারে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) বহু বছর ধরেই অস্থিরতা ও প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক অব্যবস্থা, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং ইসলামাবাদ সরকারের প্রতি ক্ষোভের আগুন বরাবরই দাউ দাউ করে জ্বলেছে এই অঞ্চলে।
সম্প্রতি আজাদ জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী কমিটি (JAAC) শাহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক গণআন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ন্যায্য অধিকার, স্বচ্ছ প্রশাসন ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের দাবিতে একত্রিত হওয়া। কিন্তু এই গণআন্দোলন যতই জনমুখী হচ্ছে, ততই উদ্বেগ বেড়েছে পাকিস্তানের প্রশাসনিক মহলে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তেজনায় টগবগ করছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর। JAAC-এর ডাকে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজারো মানুষ। তারা শাহবাজ সরকারের দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
একইসময়ে ইসলামাবাদের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের বাইরে সাংবাদিকেরা এই আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। ইসলামাবাদ পুলিশের একটি দল প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে সাংবাদিকদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের হাতে লাঠি, বেত ও অন্যান্য সরঞ্জাম ছিল। তাদের চোখে-মুখে ছিল রাগ ও আতঙ্কের ছাপ।
ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশের দলটি ক্লাবের গেট ভেঙে ঢুকে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর। অভিযোগ উঠেছে—যে সাংবাদিকেরা JAAC-এর আন্দোলনের খবর প্রকাশ করেছিলেন, তাদের গ্রেফতার করতেই পুলিশ এই হানা দেয়। প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তারাও যখন বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তখনও পুলিশ হঠাৎ হানা দিয়ে লাঠি চালায়।

ঘটনার পর ইসলামাবাদ পুলিশের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে—তারা “আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে” অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় কেউই। সাংবাদিক মহল, মানবাধিকার সংস্থা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি—এটি স্পষ্টতই সংবাদমাধ্যমকে স্তব্ধ করার চেষ্টা।
অন্যদিকে শাহবাজ শরিফ সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার দায় স্বীকার না করে বলা হয়েছে, “এটি একটি অপ্রীতিকর ভুল বোঝাবুঝি।” কিন্তু সরকার বিরোধী শিবিরের মতে, এটি কোনো ভুল নয়—বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা, যাতে জনমানসে ভয় সৃষ্টি করা যায় এবং আন্দোলনের খবর চেপে রাখা যায়।

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের স্থানীয় জনগণ ইতিমধ্যেই সরকারের প্রতি ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের মতে, সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জনগণের কণ্ঠস্বর দমন করছে। স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, “এখানে মানুষ বিদ্যুৎ, জল, চাকরি—এই মৌলিক চাহিদাগুলো চায়। কিন্তু সরকার দিচ্ছে কেবল গুলি আর লাঠির জবাব।”
অন্যদিকে, ইসলামাবাদের সাংবাদিক মহলও ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, “প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের আশ্রয়স্থল। সেই জায়গায় ঢুকে পুলিশ হামলা চালাবে—এটা ভাবাও যায় না। এটি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়।”
আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলিও এই ঘটনার নিন্দা করেছে। তারা বলছে, “সাংবাদিকদের উপর হামলা মানে জনগণের উপর হামলা। গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।”

comp 1661759474023 1759475163

পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বহু বছর ধরেই প্রশ্নের মুখে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর ২০২4 সালের রিপোর্টে পাকিস্তান ১৫০টিরও বেশি দেশের মধ্যে ১৫০তম স্থানে রয়েছে সংবাদস্বাধীনতার সূচকে। এই ঘটনার পর সেই অবস্থান আরও খারাপ হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক মহল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে আন্দোলনের ঢেউ আসলে ইসলামাবাদ সরকারের ভেতরের দুর্বলতাকে প্রকাশ করছে। মানুষ এখন আর ভয় পায় না—তারা তাদের অধিকার চাইছে। আর সাংবাদিকেরা সেই সত্য তুলে ধরছেন বলেই তারা সরকারের নিশানায় পরিণত হচ্ছেন।
এই হামলা শুধু সাংবাদিকদের নয়, সাধারণ মানুষেরও কণ্ঠরোধের চেষ্টা। গণআন্দোলনের খবর চাপা রাখতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু এই যুগে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া ও নাগরিক সাংবাদিকতা এত শক্তিশালী, সেখানে সত্যিকে চেপে রাখা কি আদৌ সম্ভব?

pakistan press club attack 2025 10 03 16 39 23

ইসলামাবাদের এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি এখন পাকিস্তানের দিকে। মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে জাতিসংঘের সাংবাদিক সুরক্ষা কাউন্সিল—সবাই চাইছে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছ তদন্ত।
অন্যদিকে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে আন্দোলনের আগুন এখনো নিভে যায়নি। স্থানীয় জনগণ এখন আরও সংগঠিত হচ্ছে। তাদের দাবি—সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক এবং যারা হামলার সঙ্গে যুক্ত, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পর ইসলামাবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও কমবে। জনগণের আস্থা হারালে যে কোনো সরকারের টিকে থাকা কঠিন—এটাই এখন বাস্তবতা।

pakistan police attack journalists islamabad press club pok protests 2025 10 6dbcf62b3abf792cb0fcd708e45d2ad3

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সাংবাদিকদের উপর পুলিশের এই হামলা শুধু একটি ঘটনাই নয়—এটি পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও সংবাদস্বাধীনতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তুলেছে। যেসব সাংবাদিক জনগণের কথা বলেন, তাদের উপর যদি এভাবে হামলা হয়, তবে সে সমাজে সত্যের স্থান কোথায়?
আজ যখন গোটা দেশ নিন্দায় মুখর, তখন প্রয়োজন সাহসিকতার সঙ্গে সত্য বলার। পাকিস্তানের প্রশাসনের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments