“The meaning of the word ‘Trinamool MLA’ has changed to ‘money-looting agent'”: Rudranil Ghosh:টিটাগরে বিস্ফোরণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল, আর এই ঘটনার জেরে ফের সামনে এলো শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ। সম্প্রতি টিটাগরের তৃণমূল কাউন্সিলর আরমান মন্ডলের ফ্ল্যাটে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যেখানে বোমা মজুত থাকার অভিযোগ উঠেছে সরাসরি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই। ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। পুলিশ ইতিমধ্যে কাউন্সিলর সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির পক্ষ থেকে টিটাগরে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ, অভিনেতা ও বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ সহ অনেকে। এই প্রতিবাদ সভায় অর্জুন সিং স্পষ্টভাবে বলেন, “এই বিস্ফোরণে যে পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, তা সাধারণ বিষয় নয়। আমি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে এনআইএ-র হস্তক্ষেপ চাই। এত বিস্ফোরক সাধারণ মানুষ রাখে না, এটা সোজা কথায় সন্ত্রাসমূলক প্রস্তুতির ইঙ্গিত।” সভার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ, যিনি তাঁর বক্তব্যে শুধু এই ঘটনা নয়, শাসকদলের ভেতরের ‘অভ্যন্তরীণ চেহারা’ নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী আমার বন্ধু, কিন্তু তিনি এই আরমান মন্ডলের মতো কাউন্সিলরদের টিকিট দিয়েছেন। যাঁদের বিরুদ্ধে আজ বিস্ফোরণের মতো মারাত্মক অভিযোগ। এটা কি শুধুই বন্ধুত্বের কারণে না কি এর পেছনে আছে আরেকটা জটিল রাজনৈতিক খেলা?” এখানেই থামেননি তিনি, আরও বলেন, “তৃণমূল টলিউড থেকে যারা বিধায়ক বানিয়েছে, সাংসদ বানিয়েছে, তারা কেউ রাজনীতি করছে না, তারা চাকরি করছে তৃণমূলে। জিতেও কোনও স্বাধীনতা নেই। তাদের দিয়ে দল যে কাজ চায়, তোলাবাজি হোক বা অন্য কিছু—তা করাতে বাধ্য করে। যারা করেন না, বা কান্নাকাটি করেন, তাদের ১০-২০ লক্ষ টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।” রুদ্রনীলের বক্তব্যের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশ ছিল, “আজ তৃণমূল MLA শব্দের আসল মানেই দাঁড়িয়েছে—‘মানি লুটিং এজেন্ট’। এটাই বাস্তব।” তাঁর এই বক্তব্যে সভাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা যায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, কেউ হাততালি দেন, কেউ আবার মোবাইলে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্য ইতিমধ্যেই আলোচনার ঝড় তুলেছে।

প্রশ্ন উঠছে, যেখানে টিটাগরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন বিস্ফোরক পাওয়া যাচ্ছে এবং তাতে শাসকদলের কাউন্সিলর জড়িয়ে যাচ্ছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এই ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, সাধারণ মানুষের মনেও তৈরি হয়েছে ভয়ের বাতাবরণ। স্কুল, বাজার, ওয়ার্ড অফিস—সবকিছু যেন অনিরাপদ মনে হচ্ছে। অন্যদিকে, ব্যারাকপুরের তৃণমূলের এক নেতা নাম না করে বলেন, “এটা একটা চক্রান্ত। কেউ দলের বদনাম করার জন্যই এই ঘটনার সঙ্গে কাউন্সিলরের নাম জড়াচ্ছে। তদন্তের পরই সব স্পষ্ট হবে।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রুদ্রনীল ঘোষের মতো একজন সাংস্কৃতিক জগত থেকে উঠে আসা মানুষ যখন এমন প্রকাশ্য ভাষায় তৃণমূলের কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন সেটিকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। অনেকের মতে, এটা ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য এক বার্তা। সাধারণ মানুষও এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন তুলছেন—ভোট দিয়ে কাউকে নির্বাচিত করার পরে যদি তারাই দুর্নীতির মূল হোতা হন, তবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোথায়? পাশাপাশি, অর্জুন সিং-এর এনআইএ তদন্ত চাওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। যদি সত্যিই এনআইএ তদন্ত হয়, তাহলে রাজ্যের প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ফলে এই বিস্ফোরণ শুধু টিটাগরের নয়, রাজ্য রাজনীতিরও বড় ইস্যু হয়ে উঠছে। সামনে পঞ্চায়েত বা বিধানসভা নির্বাচন থাকলে এই ইস্যু আরও বড় হয়ে উঠতে পারে।