Sunday, April 20, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দিল আদালত

ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দিল আদালত

The court granted the settlement proposal : যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে ঘিরে বিতর্কের কোনো শেষ নেই, বিশেষ করে তাঁর সময়ে নানান কঠোর সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের মনে এক ভয় আর অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি করেছিল। এমনই এক বিতর্কিত পরিকল্পনা ছিল, যে সমস্ত অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তাঁদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, যেখানে তাঁদের মানবাধিকার রক্ষা বা নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা থাকবে না। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বহু মানুষ পরিবারছাড়া, আশ্রয়হীন এবং বিপদের মুখে পড়তেন। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল আদালত, বিচারক ব্রায়ান মারফির নেতৃত্বে, এই পরিকল্পনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যেন একটি বড় ধরনের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ অভিবাসী, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি থেকে আসা পরিবারগুলি। বিচারক ব্রায়ান মারফি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “মানবাধিকার আর নিরাপত্তা একসাথে চলতে হবে, অভিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার আগে তাঁদের কথা শোনা এবং সুবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।” ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা ছিল, সীমান্ত পেরিয়ে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি তৃতীয় দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, অনেকটা যেন ‘ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া’র মতোই। তবে এই তৃতীয় দেশ কোথায় হবে, সেই দেশ নিরাপদ কি না, সেখানে কেউ আশ্রয় চাইলে কী মানবাধিকার বজায় থাকবে—এসব নিয়ে কোনও দায়িত্ব বা স্বচ্ছতা ছিল না।

02bed424ce9b4d6e4c7706b5305498cea217c664c2d09273

এক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, “এটা যেন একটি মানবিক সংকট তৈরি হতো, যেখানে একজন মানুষ নিজের নিরাপত্তার কথা বলার সুযোগ না পেয়ে, অবাধ্য হয়ে এক অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিতেন।” এই রায়ের ফলে যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি, ভারতীয় বা পাকিস্তানি অভিবাসীরা স্বস্তি পেয়েছেন, তা নয়—এই ঘটনাটি গোটা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে মানবাধিকারকে গুরুত্ব না দিলে প্রশাসনিক পরিকল্পনা টিকবে না। নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি অভিবাসী বলেন, “এই রায় শুনে বুকের ভেতরটা যেন হালকা হয়ে গেছে। আমরা জানি, কমপক্ষে আইনের চোখে আমরা মানুষ হিসেবে গণ্য হচ্ছি।” ট্রাম্প প্রশাসন যদিও এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আপিল করতে পারে, তবে আপাতত অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে স্বস্তির ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে নিজের মতামত জানিয়ে বলছেন, “এটা একটা মানবিক জয়, আইন ও মানবাধিকারের পক্ষে জয়।

” উল্লেখ্য, ট্রাম্পের সময় অভিবাসীদের উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলির উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করে বন্দি করা, কিংবা সীমান্তে প্রাচীর তোলার মতো পদক্ষেপ মানুষের মনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তৈরি করেছিল। আবার এই রায়টি এমন সময় এসেছে, যখন ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং অভিবাসন ইস্যুকে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের বড় একটি অংশ করতে চাইছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই রায় ট্রাম্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, কারণ এটি দেখিয়ে দেয় আদালত এখনো মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলছে।” দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এই রায় বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ প্রতিদিনই শত শত মানুষ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন ভাল ভবিষ্যতের আশায়। তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিক শরণার্থী, কেউ কেউ অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার, কেউবা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার।

এইসব মানুষদের জন্য একটি মানবিক অভিবাসন নীতি কতটা জরুরি, তা আরও একবার প্রমাণ করলো মার্কিন আদালতের এই রায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন এবং এদের অনেকে এখনো বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের জন্য এই রায় যেন জীবনে নতুন আশার আলো। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মানবতার পথে ফিরে এসেছে।” তবে এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্টে এই রায় কতটা স্থায়ী হয় এবং ট্রাম্প শিবির কিভাবে এর রাজনৈতিক ব্যবহার করতে চেষ্টা করে। তবে আপাতত এই রায় একটি মানবিক জয় হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে, যেখানে একজন মানুষকে শোনা, বোঝা এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি রক্ষাকবচ দাঁড় করিয়ে দিল একটি আদালত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments