The consequences of adultery, dead husband, runaway wife and lover:-একটা ঘরে সংসার গড়ে ওঠে ভরসা আর ভালোবাসার উপর, কিন্তু সেই ঘরের ছাদ যখন অবিশ্বাস আর পরকীয়ার আগুনে পুড়ে যায়, তখন শুধু সম্পর্ক নয়, জীবনও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ঠিক এমনই এক মর্মান্তিক ও রহস্যঘন মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত সুবর্ণমূর্গী ডাকবাংলা এলাকায়। মৃত ব্যক্তি, আলতাফ সেখ (৪২), যিনি দীর্ঘদিন ভিনরাজ্যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরেছিলেন। আর সেই ফেরা যে শেষ ফেরা হবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। আলতাফের ঝুলন্ত মৃতদেহ ডাকবাংলা এলাকায় বানপুলের পাশে এক ভাঙা দোকানের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়ার পরই, গোটা এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোক, আর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে নানা জল্পনা-কল্পনা।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলতাফের স্ত্রী ইদোলা বিবি ও প্রতিবেশী সালাম সেখের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পরকীয়া সম্পর্ক ছিল, যা জানার পর স্বামী আলতাফ স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বচসায় জড়িয়ে পড়েন। শেষমেশ মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনতে পান। এরপরই রাত পেরোতেই বানপুলের ধারে ঝুলন্ত অবস্থায় আলতাফের মৃতদেহ উদ্ধার হয়, গলায় ছিল দড়ির ফাঁস, আশপাশে ছিল না কোনও সুইসাইড নোট। ফলে ঘটনাটিকে ঘিরে আরও বেশি রহস্য দানা বাঁধতে থাকে।

ভগবানগোলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এটি ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে মামলা রুজু করা হয়েছে, তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে খুনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারীরা। বিশেষ করে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে আলতাফের স্ত্রী ইদোলা বিবি ও তার কথিত প্রেমিক সালাম সেখ, যারা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। পুলিশ ইতিমধ্যেই তাদের খোঁজে সার্চ অপারেশন শুরু করেছে, এবং পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।মহিশাস্থলি গ্রাম পঞ্চায়েতের এই শান্ত এলাকা হঠাৎ করে এমন একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে আতঙ্কিত। প্রতিবেশী সাহেরা বিবি বলেন, “ওরা তো সাধারণ গরিব মানুষ। আলতাফ ভিনরাজ্যে গিয়ে কামকাজ করে টাকাপয়সা পাঠাত। কে জানত ওর ঘরেই এমন আগুন জ্বলছে!” অপর এক প্রতিবেশী রফিকুল হক বলেন, “মঙ্গলবার রাতেই অনেক আওয়াজ হচ্ছিল ওদের বাড়িতে। মনে হচ্ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা চলছে। তারপর সকালে এমন খবর পেলাম।”আলতাফের আত্মীয়রা ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে আলোচিত দম্পতির প্রেমকাহিনি ও স্বামীর প্রতিবাদে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা জানিয়েছেন। আলতাফের ভাই মোহিন সেখ অভিযোগ করেন, “আমার দাদা কিছুদিন আগেই বুঝে ফেলেছিল, বৌদি ও সালাম মিলে কিছু একটা করছে। ও অনেকবার চ্যালেঞ্জ করেছিল ওদের। ওর মরণের পেছনে ওদের হাত না থেকে পারে না।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। একদিকে তৃণমূল নেতা আবু তালেব মোল্লা বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। পুলিশকে বলেছি, দোষীদের যেন দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” অপরদিকে, বিজেপি নেতা সঞ্জীব ঘোষ অভিযোগ করেছেন, “এই ধরনের অপরাধ রুখতে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।”বিশেষজ্ঞদের মতে, পরকীয়া সম্পর্ক থেকে যে অপরাধ জন্ম নিতে পারে, সেটি সমাজের নৈতিক ভাঙনের ইঙ্গিত দেয়। সমাজবিজ্ঞানী ড. পার্থসারথি বসু বলেন, “আজকের সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক যখন বিশ্বাস হারাতে শুরু করে, তখন পরিণতি এমনই হতে পারে। তবে আইন কখনোই কাউকে এইভাবে শাস্তি দেওয়ার অধিকার দেয় না।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু একটি হত্যার ঘটনা নয়, এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি দৃষ্টান্ত। এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ ভূমিকা জরুরি।”

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, আলতাফের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এবং সন্দেহভাজনদের মোবাইল টাওয়ার লোকেশনও ট্র্যাক করা হচ্ছে।এই ধরনের ঘটনা যে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বড় একটা প্রশ্ন তুলে দেয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে একটি পরিবার ভেঙে পড়ছে, অন্যদিকে একটি মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য, আতঙ্ক এবং জনরোষ। আর এই ঘটনায় যেভাবে স্ত্রীর ভূমিকায় আঙুল উঠছে, তাতে সমাজে নারীর অবস্থান নিয়েও নানা ধরনের মতামত জন্ম নিচ্ছে।সবশেষে বলা যায়, ভগবানগোলার এই পরকীয়ার জের ধরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পুরো সত্য কী, তা এখনও তদন্তাধীন। তবে এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—ঘরের ভেতরের আগুন যখন বাইরে ছড়ায়, তখন তার আঁচ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ কবে এই পলাতক স্ত্রী ও প্রেমিককে গ্রেফতার করতে পারে, আর কবে আলো আসবে এই অন্ধকার গল্পের শেষে।