Tesla’s profit drops, Musk makes new announcement : বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে আলোড়ন তোলা টেসলা এবার এক বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা ও আয়—দুটোই চোখে পড়ার মতোভাবে কমে গেছে। এ একেবারেই স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে বড় কোনো পরিবর্তনের। এই ক্ষয়িষ্ণু পরিস্থিতির মধ্যে, টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ ঘোষণা দিয়েছেন—তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে নিজের দায়িত্ব কমিয়ে টেসলার দিকে আবারও মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘোষণাটি যেমন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, তেমনি প্রযুক্তি ও বাণিজ্য জগতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে—টেসলার ভবিষ্যৎ ঠিক কোন পথে এগোচ্ছে?
টেসলার সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি থেকে আয় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। তার চেয়েও চিন্তার বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা কমে গেছে ৭০ শতাংশের বেশি, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। অর্থাৎ, যেখান থেকে প্রতিনিয়ত লাভ আসত, এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে লাল সংকেত। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি হয়তো চলতেই থাকবে এবং তারা এখনই কোনো প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে পারছে না। টেসলার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “চাহিদা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে।”
এই পরিস্থিতির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান BYD-এর মতো কোম্পানিগুলো অনেক সস্তায় মানসম্মত গাড়ি দিচ্ছে, যার ফলে টেসলার বিক্রি কমছে। আবার ইউরোপে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা পরিবর্তন হওয়ায় অনেক মানুষ এখন আর নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে আগ্রহী নয়। উপরন্তু, টেসলার বেশ কিছু মডেল পুরনো হয়ে গেছে এবং নতুন উদ্ভাবনের গতি কিছুটা কমেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইলন মাস্কের ঘোষণা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি নিজে জানিয়েছেন, “আগামী মাস থেকে ডিওজিই (Department of Energy & Government Initiatives)-তে আমার সময় বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করবে। আমি এখন টেসলার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে চাই।” এই মন্তব্য থেকে পরিষ্কার, মাস্ক নিজেও বুঝেছেন—তিনি টেসলার থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলেছিলেন, এবং সেটিরই প্রভাব পড়েছে সংস্থাটির পারফরম্যান্সে।তবে মাস্কের এই পরিবর্তন শুধু টেসলার ভেতরে নয়, বাইরের দুনিয়াতেও একটা বার্তা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই তাঁর ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ রাজনীতি নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিলেন। এক বিনিয়োগকারী, ড্যানিয়েল হার্স, এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা মাস্ককে উদ্যোক্তা হিসেবে চিনি। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তিনি যে নিজের কোম্পানিকে উপেক্ষা করছিলেন, সেটা আমরা বহুদিন ধরেই দেখছিলাম। এখন তিনি আবার কাজে ফিরছেন, এটা ভালো লক্ষণ।”
টেসলার কর্মীদের মাঝেও একটা নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। সান ফ্রান্সিসকোর এক টেসলা ইঞ্জিনিয়ার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত কয়েক বছর মাস্ক খুব বেশি স্পেসএক্স, নিউরালিংক আর রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের মনে হয়েছিল, টেসলা যেন একটা স্বয়ংচালিত জাহাজ। এখন তিনি আবার ফিরে আসছেন শুনে ভালো লাগছে।”বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষের কাছেও এই খবর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৈশ্বিকভাবে টেসলা ও ইলন মাস্কের সিদ্ধান্ত বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দেয়। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন—একদিন বাংলাদেশেও রাস্তায় চলবে টেসলা বা টেসলার মতো গাড়ি। আর যদি এই কোম্পানি ডুবে যায় বা তাদের গতি হ্রাস পায়, তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রযুক্তি আগমন আরও বিলম্বিত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক যদি সত্যিই তার দৃষ্টি আবার টেসলার দিকে ফেরান, তবে আগামী প্রান্তিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। তবে সেটি করতে গেলে তাকে বাজারে নতুন উদ্ভাবন আনতে হবে, দাম কমাতে হবে এবং গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে হবে। ইতিমধ্যে তিনি একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, “আমরা স্বল্পদামে একটি নতুন কম্প্যাক্ট গাড়ি বাজারে আনব, যাতে আরও বেশি মানুষ বৈদ্যুতিক গাড়ির নাগালে আসতে পারে।”মাস্কের কথায় যেমন আশাবাদের ছোঁয়া আছে, তেমনি বাজার এখনো সন্দিহান। টেসলার শেয়ার বাজারে এখনো বেশ চাপের মুখে। গত সপ্তাহেই কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ১২ শতাংশ কমে যায়। এই নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, “টেসলা এখন এক কঠিন পথে হাঁটছে, যেখানে প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক চাপ—সব একসাথে কাজ করছে।”
এই অবস্থায় টেসলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, সেটি নির্ভর করছে মাস্কের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি কি শুধু মুখে বলবেন, নাকি সত্যিই ঘুরে দাঁড়ানোর কাজ শুরু করবেন—সেটিই এখন সবার চোখে। তবে একটা কথা নিশ্চিত—বিশ্বজুড়ে যারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিশ্বাস রাখেন, তারা এখন চাইছেন মাস্ক যেন টেসলাকে আগের মতো করে গড়ে তোলেন।আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও এই ঘটনার ছায়া পড়বে। কারণ বৈদ্যুতিক যানবাহনের বাজার এখানে এখনও নবীন। বড় কোম্পানিগুলো যখন ধাক্কা খায়, তখন সেই ধাক্কার রেশ ছোট বাজারেও পড়ে। তাই টেসলার ঘুরে দাঁড়ানো শুধু একটি কোম্পানির গল্প নয়, এটি বৈশ্বিক প্রযুক্তির গতি নির্ধারণের বিষয়ও বটে।