terrible fire in a vegetable godown in Siliguri: শিলিগুড়ি শহরের বাগরাকোট এলাকায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আবারও ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও বাসিন্দারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় টাউন স্টেশন বাজার এলাকায় একটি বড় সবজির গোডাউনে হঠাৎ আগুন লেগে যাওয়ার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দীপাবলীর মতো উৎসবের সময়ে এই অগ্নিকাণ্ডে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে, আর ক্ষতির পরিমাণ দেখে চোখে জল এসেছে অনেকের। আগুন লাগার কারণ হিসেবে প্রাথমিক অনুমান শর্ট সার্কিট, তবে স্থানীয় মানুষজন ও দমকল কর্মীরা জানিয়েছেন, আগুনের প্রকৃত কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে।
আগুনের লেলিহান শিখায় প্রায় তিনটি দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়। এক দোকানে মজুদ ছিল প্রচুর পেঁয়াজ ও রসুন, যা সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্য দুটি দোকানে ছিল শাকসবজি এবং ফুল, যা একইভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীপাবলীর সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা দোকানদার মানিক দাস বলেন, “সারা বছর এই সময়ে ব্যবসার সিজন, আর এখন এই আগুনে সব শেষ। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।” তার মতো আরো অনেক ব্যবসায়ীও এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, যা তাদের জীবিকায় গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যান দমকল বিভাগের কর্মীরা। আগুন নেভানোর কাজে স্থানীয় মানুষজনও তাদের সহায়তা করেন। আগুনের তীব্রতা এমন ছিল যে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দমকল কর্মীদের লাগাতার পরিশ্রম করতে হয়েছে। দমকল বিভাগের প্রধান রাহুল সিং বলেন, “আগুনের উৎস এখনও পরিষ্কার নয়, তবে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।” স্থানীয় কাউন্সিলর অজয় সেন এই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সমাজকে দ্রুত সাহায্যের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
শিলিগুড়ি শহর, যা উত্তরবঙ্গের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র, সেখানে এই ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগার ঘটনা বারবার ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমিতা দত্ত বলেন, “শিলিগুড়ির বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। এতে করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। প্রশাসনের উচিত আরও তৎপর হয়ে কাজ করা।”
এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়ছে। শিলিগুড়ির মতো ব্যস্ত শহরে এই ধরনের দুর্ঘটনা ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রায় বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে, এবং আগামী দিনে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে প্রশাসনের আরও সচেতন হওয়া উচিত। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনার পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছে। শিলিগুড়ির মেয়র রঞ্জন রায় জানিয়েছেন, “আমাদের শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা শীঘ্রই এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেব।” তবে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি আগে দেওয়া হলেও এখনও শহরের অনেক বাণিজ্যিক স্থানে অগ্নি-নিরাপত্তার অভাব স্পষ্ট।
এই ঘটনার ফলে দীপাবলীর মতো উৎসবের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত সাহায্যের আবেদন করেছেন এবং একান্ত ভাবে চাইছেন যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বাড়ানো, দমকল বিভাগের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, এবং আধুনিক অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করাই এখন প্রয়োজন। এই অগ্নিকাণ্ড শিলিগুড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অভাবকে সামনে এনে দিল এবং এটি দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন।