Tensions rise over strike in Asansol, two sides clash : আসানসোলে মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের বাতাস যেন ছিল থমথমে, যেন কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায় রয়েছে, আর সেই আশঙ্কাকেই সত্যি প্রমাণ করল ধর্মঘটকে ঘিরে ঘটে যাওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি। এদিন সারা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের ডাকে যে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল, তার প্রভাব পড়ল আসানসোল শহরে। সরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ধর্মঘটীরা সকালে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করলে তাতেই ঘটনার সূত্রপাত। ধর্মঘটকারীদের সেই চেষ্টা ঘিরেই দেখা দেয় ব্যাপক উত্তেজনা, কারণ পাল্টা পথে রুখে দাঁড়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে চলতেই পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে কিছুক্ষণ পরে তা রীতিমতো ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ওই সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, অনেকে হন্তদন্ত হয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসযাত্রী থেকে শুরু করে পথচলতি মানুষজন ছুটে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী এক বাসযাত্রী শ্যামল দাস বলেন, “আমি সকাল ৮টা নাগাদ রেল স্টেশন থেকে হিরাপুর যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা দল বাস আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরই অন্য একটা দল এসে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছয় আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু হয় পুলিশের কড়া তৎপরতা। পুলিশের উপস্থিতিতেই দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করা হয় এবং বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা শুরু হয়। পুলিশের এক কর্তা জানান, “আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন সব স্বাভাবিক আছে, কিন্তু কেউ আইন হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আসানসোল পুরনিগমের এক আধিকারিক জানান, “জনসাধারণের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই কারণে প্রশাসনের তরফে আগে থেকেই বাস পরিষেবা চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিষেবা বজায় রাখতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।” এই ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়ে বামপন্থী সংগঠনগুলির তরফে দাবি করা হয়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী নীতির প্রতিবাদেই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, শ্রম আইন সংস্কার সহ একাধিক বিষয়ে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই গণআন্দোলন। আসানসোল শ্রমিক সংগঠনের এক সদস্য সুপ্রকাশ মুখার্জি বলেন, “সরকার শুধু কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখছে, শ্রমিকদের পেটে লাথি মারছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের আন্দোলনে বাধা দিতে এসেছে।” অন্যদিকে, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এই ধর্মঘট আসলে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের মতে, এই ধরনের কর্মসূচি জনগণের উপরে চাপ সৃষ্টি করে, অথচ কোন বাস্তব সমাধান আনে না। তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের নেতা উৎপল ঘোষ বলেন, “ধর্মঘটের নামে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুণ্ডামি চলবে না। বাস আটকে দেওয়া, লোকজনকে আতঙ্কিত করা — এসব সহ্য করা হবে না। আমরা তাই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছি যাতে বাস চলাচল বন্ধ না হয়।” এই দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, হাসপাতালের রোগী পরিবহণ — সব কিছুই খানিকটা থমকে গিয়েছিল সকালবেলায়। ট্যাক্সি এবং অটোচালকরাও আতঙ্কে পরিষেবা বন্ধ রাখতে শুরু করেন, ফলে যান চলাচল আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। মুকুল রায় নামের এক অফিসযাত্রী বলেন, “আজ খুব দরকারি একটা মিটিং ছিল কলকাতায়, কিন্তু এই গোলমালে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারিনি। কবে নাগাদ রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের কষ্টটা বুঝবে?”

পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে শহরবাসীর মধ্যে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি এমন রাজনৈতিক সংঘাত ও ধর্মঘট ঘনঘন ঘটে, তবে শহরের সামগ্রিক পরিবেশ ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, “ধর্মঘট করতেই পারেন, কিন্তু তার একটা সুসংহত পদ্ধতি থাকা উচিত। এভাবে মাঝরাস্তায় বাস আটকানো, বচসা — এসব মেনে নেওয়া যায় না। এতে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।” আসানসোলে এর আগে বহুবার ধর্মঘট ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সম্প্রতি তৃণমূল বনাম বামেদের এই রকম মুখোমুখি সংঘর্ষ আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, আগামী দিনে পঞ্চায়েত বা বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এই ধরনের সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো জনসংযোগে যত বেশি মন দিচ্ছে, মাঠে-ময়দানে তাদের তত বেশি সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, যার পরিণতিতে এমন ঝামেলার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যায়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যেকোনও রকম আইনভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটকারী সংগঠনগুলিকে আহ্বান জানানো হয়েছে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে তাঁদের বক্তব্য জানানোর জন্য। সার্বিকভাবে আসানসোলের ধর্মঘট-উত্তর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও, এই ঘটনা দেখিয়ে দিল যে, শহরের রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা স্পর্শকাতর এবং ছোট একটি কর্মসূচিও কত বড় ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই শুধুমাত্র রাজনৈতিক অভিসন্ধি নয়, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও স্বস্তির দিকটিও মাথায় রেখে ভবিষ্যতে যেকোনও কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ করা দরকার।