Tensions rise over BJP protest at Salanpur police station:আসানসোলের সালানপুর থানা চত্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যেন একটা রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, যখন বিজেপি দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা হঠাৎ করেই জড়ো হয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। উত্তেজনা তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়, যখন দেখা যায় পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়েছে। রাস্তায় তখন স্লোগান, উত্তেজিত মুখ আর থানা ঘিরে মানুষের জমায়েত — গোটা সালানপুর যেন মুহূর্তে থমকে যায়। ঘটনাটা এমন, কিছুদিন আগে সালানপুর অঞ্চলের এক বিজেপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে, এবং বিজেপির অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে থানার লকআপে মারধর করা হয়েছে। এই অভিযোগ সামনে আসতেই বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব প্রতিবাদে নামে এবং ঠিক করেন যে থানার সামনে মিছিল ও বিক্ষোভ করে পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া হবে।

সেইমতো বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ শ’খানেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক পতাকা হাতে থানার দিকে এগিয়ে যান। শুরু হয় স্লোগান, “পুলিশ সন্ত্রাস বন্ধ করো”, “মিথ্যা মামলা রদ করো”, “অন্যায়ের প্রতিবাদে বিজেপি পথে”। উপস্থিত ছিলেন সালানপুর মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ, যিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, “যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে একজন সৎ কর্মী। কোনও অপরাধ না করেই ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে। আমরা চুপ থাকব না। এটা গণতন্ত্রে চলতে পারে না।” ঘটনাস্থলে সাংবাদিকেরা পৌঁছলে দেখতে পান, বিক্ষোভকারীরা থানার সামনে মাটিতে বসে পড়ে ‘ধর্মঘটী’ কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়, যাতে অবরোধ না করে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলা যায়। কিন্তু উত্তেজিত কর্মীরা মানতে রাজি হন না। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন কর্মীর ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। থানা চত্বরে তখন বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল। কিছু কর্মী পুলিশের দিকে ধাক্কা মারলে পুলিশ বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে বলে স্থানীয়রা জানান, যদিও পুলিশ পক্ষ থেকে লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। পুলিশ আধিকারিক প্রদীপ সরকার বলেন, “মারধরের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যার বিরুদ্ধে মামলা ছিল, তাকে যথাযথ নিয়ম মেনেই গ্রেফতার করা হয়েছে। থানার ভেতরে বা বাইরে কোনওরকম অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার হয়নি।” তবে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই কর্মী রতন ঘোষকে মারধরের প্রমাণ হিসেবে পরিবারের কাছে কিছু ছবি ও ভিডিও পাঠানো হয়েছে, যা তাঁরা দলের নেতৃত্বকে দিয়েছেন এবং বিষয়টি দলীয় পর্যায়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার পরে সালানপুর থানা এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে আর কোনো অপ্রিয় পরিস্থিতি না তৈরি হয়।
এলাকার দোকানপাট কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল, যান চলাচলেও সমস্যা দেখা দেয়। বিক্ষোভের পরবর্তী অংশে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন, তাঁরা এর প্রতিবাদে জেলা জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন এবং প্রয়োজনে ধর্না কর্মসূচি চলবে যতদিন না অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মণ্ডল বলেন, “সব পুজো পার্বন চলছে, এই সময়ে এরকম হাঙ্গামা কারও ভালো লাগে না। সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়। রাজনীতি থাকুক, কিন্তু শান্তিপূর্ণ হোক।” এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “বিজেপি জনসমর্থন হারিয়ে এখন সস্তা রাজনীতি করছে। পুলিশ নিজের কাজ করছে, এটা বাধা দেওয়া ঠিক নয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতি বারবার তৈরি হলে প্রশাসনের উপর চাপ বাড়বে এবং রাজনৈতিক সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। এমনও শোনা যাচ্ছে, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব এই ইস্যুতে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছে দিতে পারেন। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যথাযথ তদন্তের পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই ঘটনায় একটাই স্পষ্ট — সালানপুরের রাজনৈতিক উত্তাপ আগামী কয়েকদিন রাজ্য রাজনীতির চর্চায় থাকবেই। এ এক দৃষ্টান্ত যেখানে স্থানীয় স্তরের একটি ঘটনা বৃহত্তর রাজনীতির খেলা হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়ছে, বিশেষ করে পুজোর এই সময়ে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এখন দেখার, প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং পরিস্থিতি কতটা দ্রুত স্বাভাবিক হয়।