Tension in Durgapur around the eviction of the railway:দুর্গাপুরের আম্বেদকর কলোনি এলাকার এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে রেলের উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং অশান্তি দেখা গেছে। এই ঘটনার কারণে সেখানকার বাসিন্দারা শুধু ক্ষুব্ধই হননি, তারা রেলের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চলুন, এই ঘটনার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডানকুনি থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত রেলের ফ্রেড করিডরের কাজ শুরু হয়েছে, যার জন্য বিভিন্ন এলাকায় রেলের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। দুর্গাপুরের আম্বেদকর কলোনি থেকে শুরু করে বেশ কিছু স্থানকে রেলের অবৈধ দখল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল, এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় এবং রেলের কর্তৃপক্ষ বুলডোজার নিয়ে আম্বেদকর কলোনিতে পৌঁছায়। কিন্তু, এমনকি শুরুতেই সেখানকার জনতা রেলের কাজ আটকে দেয় এবং উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়।
রেলের আধিকারিকরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে, স্থানীয় জনগণ তাদের প্রতিরোধ করেন। উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে এবং এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পারিয়াল। তিনি তার অনুগামীদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানকে বাধাগ্রস্ত করেন এবং রেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তুমুল বচসা শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা রেলের কর্তাদের ঘিরে ধরে প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, অবশেষে রেল কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযান স্থগিত করে ফিরে যায়।
বিশ্বনাথ পারিয়াল, যিনি দুর্গাপুরের একজন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর, তিনি এই পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, “এটি খুবই অত্যাচারী পদক্ষেপ। যারা এখানে বাস করছে, তাদেরকে যদি উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে তাদের কোথায় যাবে? এই অঞ্চলের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছেন। রেল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের জীবনযাত্রার প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাতো, তবে হয়তো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা কখনোই এই ধরনের অনৈতিক উচ্ছেদ মেনে নেব না। সাধারণ মানুষের স্বার্থের পক্ষে আমরা সবসময় দাঁড়াবো।”
এই ঘটনার ফলে এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন, কারণ তারা মনে করছেন যে, তাদের অধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তারা এভাবে রেল কর্তৃপক্ষের অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। দুর্গাপুরের এক বাসিন্দা বললেন, “আমরা এখানে অনেক বছর ধরে আছি। আমাদের কি এভাবে আমাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে? রেল কর্তৃপক্ষকে আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে হবে।”
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও তীব্র হতে পারে কি না। কারণ, এলাকাবাসীরা নিজেদের জায়গায় থাকতে চান, তারা রেলের আধিকারিকদের কাছে একটি ন্যায্য সমাধান চাচ্ছেন। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলছে যে, এই উচ্ছেদ অভিযান ফ্রেড করিডরের কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের কোনও প্রকার পুনর্বাসন বা উপযুক্ত সমাধান দেওয়া হয়নি।
এদিকে, প্রশাসনও এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং তারা ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী পাঠিয়েছে। তবে, নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। প্রাথমিকভাবে, রেলের উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এটি পুনরায় শুরু হতে পারে, যদি না কোনও সমাধান বের করা যায়।
এটা বলা যেতে পারে যে, দুর্গাপুরে এই উচ্ছেদ ঘিরে উত্তেজনা শুধু সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনকেই প্রভাবিত করছে না, বরং শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশও বিপর্যস্ত হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব হলো, এমন অভিযানের আগে, স্থানীয় মানুষের পুনর্বাসন বা অন্য কোনও সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। শুধু উচ্ছেদ নয়, তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করাও জরুরি।
অন্যদিকে, যদি এই পরিস্থিতি সমাধান না হয় এবং উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু হয়, তাহলে তা আরও বৃহত্তর বিক্ষোভ এবং অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই, সরকারের উচিত হবে দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সমস্যার সমাধান বের করা এবং রেলের আধিকারিকদেরও উচ্ছেদ অভিযান বাস্তবায়ন করার আগে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা, যা শুধুমাত্র রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনগণের জন্য নয়, বরং পুরো দুর্গাপুরের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, যে সমাধান চাইলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনা এবং সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।