Temperatures are rising, but there is a chance of scattered rain:- দক্ষিণবঙ্গের আকাশ যেন বিড়ম্বনার প্রতীক হয়ে উঠেছে—একদিকে মাথার উপর প্রখর রোদের রোষ, অন্যদিকে শরীরে ঘামের জ্যাম, আর তারই মাঝে মাঝে হঠাৎই দু’ফোঁটা বৃষ্টির ঠাণ্ডা পরশ। তবে সেটাও যেন পর্যাপ্ত নয় এই চরম অস্বস্তির সামনে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে গরম ও অস্বস্তির পারদ আগামী দু’দিনে আরও চরমে পৌঁছবে, কারণ এখানকার আকাশে এখনো বর্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি। বরং গরম হাওয়া ও জলীয় বাষ্পের কারণে “হিউমিড হিট” পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তবে সামান্য স্বস্তির ইঙ্গিত রয়েছে উত্তরবঙ্গ ও সংলগ্ন কয়েকটি জেলায়, যেখানে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।রবিবার, কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই সময়ের জন্য বেশ অস্বাভাবিক। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩৫ ডিগ্রির ঘরে, তবে বাতাসে ৬৫ থেকে ৯৪ শতাংশ জলীয় বাষ্প থাকায় গায়ে অনুভূত তাপমাত্রা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. শংকর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “এই পরিস্থিতিকে হিউমিড হিট বলা হয়। যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি, শরীর ঘাম ঝরাতে পারছে না ঠিকমতো, ফলে ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।”

দক্ষিণবঙ্গের জেলা যেমন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি সহ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুষ্ক ও তাপপ্রবাহময় পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। তাপমাত্রা আগামী কয়েক দিনে আরও ২-৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, ফলে গরম ও অস্বস্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে চরমে।এই রকম গরমে শহর ও গ্রামে উভয় জায়গাতেই মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। কলকাতার একটি প্রাইভেট সংস্থার কর্মী সঞ্জয় গুহ বললেন, “বাসে উঠলেই মনে হয় ভ্যাপসা ঘাম আর গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অফিসে এসি চলছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তায় পৌঁছতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত।” বীরভূমের এক স্কুলশিক্ষিকা মৌসুমী মণ্ডল জানালেন, “এই গরমে বাচ্চারা স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মাটির ক্লাসঘরে টিকে থাকা যাচ্ছে না।”এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও ক্লান্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ডা. অর্ণব মুখার্জি, যিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, বলেন, “যাঁরা বাড়ির বাইরে কাজ করেন, তাঁদের অবশ্যই জল বেশি করে খেতে হবে, হালকা পোশাক পরতে হবে এবং প্রয়োজনে ওআরএস সলিউশন নিতে হবে।”
তবে এই গরমের মধ্যেও একফোঁটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা। বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার-এ হালকা বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। তবে এই বৃষ্টিও হতে পারে খুবই বিচ্ছিন্নভাবে, এবং কিছু সময়ের জন্যই। কালিম্পংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ী দীপেন ছেত্রী বলেন, “বৃষ্টি হলে পাহাড়ে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। ইতিমধ্যেই বুকিং আসতে শুরু করেছে। তবে ধস যেন না হয়, সেই নিয়ে চিন্তা আছে।”আবহাওয়া দফতরের মতে, ১২ জুনের আগে দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের সম্ভাবনা কম। মৌসুমী অক্ষরেখা এখনো ভারতের দক্ষিণ দিকে অবস্থান করছে। এদিকে হিমালয়ের পাদদেশে মেঘ ও আদ্রতা তৈরি হলেও, তা বাংলার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এখনও সময় লাগবে। এই অবস্থায় দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে আরও কিছুদিন গরমের সঙ্গে লড়াই করে চলতে হবে।

এই অবস্থায় কৃষকেরাও চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বাঁকুড়ার এক কৃষক রামলাল হাঁসদা বলেন, “মাটি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখন যদি জল না পড়ে, তাহলে বীজ বোনা অসম্ভব। এই বৃষ্টির অভাবে ফসলের সময় পেছাতে হবে।” ঝাড়গ্রামের এক বাগান শ্রমিক মিঠুন হাঁসদা জানালেন, “এই গরমে বাগানে কাজ করা অসম্ভব হয়েউঠছে।ঘরে জল নেই, কুয়ো শুকিয়ে গেছে।”তবে শহরবাসী এখন একটাই প্রশ্ন করছে—“আকাশটা কবে ভিজবে?” কারণ ভ্যাপসা গরম, ঘাম, জলকষ্ট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর রাস্তায় ক্লান্তিতে নাজেহাল জনজীবন এখন শুধুই এক পশলা শান্তির বৃষ্টির আশায় তাকিয়ে আছে। এদিকে বিদ্যুৎ দফতরও জানিয়েছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুরসভা জল সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে।সব মিলিয়ে বলাই যায়, দক্ষিণবঙ্গে এখন প্রকৃতি যেন গরম ও আদ্রতার দ্বৈত আক্রমণে অতিষ্ঠ মানুষকে দগ্ধ করে তুলছে। যদিও উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির আশা থাকলেও, দক্ষিণবঙ্গকে এখনও অপেক্ষা করতেই হবে সেই প্রতীক্ষিত বর্ষার জন্য। আপাতত এই সময়ে সাবধানতা, জল খাওয়া, সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা এবং শিশু-বৃদ্ধদের বিশেষ যত্নই একমাত্র সমাধান।