Teacher posts derogatory post in the name of Chief Minister, complaint filed:-উত্তর ২৪ পরগনার ছোট্ট জনপদ বাগদা হঠাৎই এখন চর্চার কেন্দ্রে, কারণ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটেছে এমন এক ঘটনা যা শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, সাধারণ মানুষকেও নাড়িয়ে দিয়েছে ভিতর থেকে, ওই দিন বাগদা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিংকর মণ্ডলের চোখে পড়ে ফেসবুকে করা একটি পোস্ট, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও ছবি ব্যবহার করে করা হয়েছে কিছু কুরুচিকর ও আপত্তিজনক মন্তব্য, বিষয়টি দেখতে পেয়েই তিনি বলেন, “এটা শুধু নেত্রীর নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সাধারণ মানুষের অপমান,” এরপরেই তিনি বাগদা থানায় ছুটে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, অভিযোগের তির বাগদা কুরুলিয়া হাইস্কুলের এক শিক্ষিকার দিকে, যিনি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন, একজন শিক্ষিকার কাছ থেকে এমন পোস্ট আশা করেননি কেউই, শিক্ষিকা হিসেবে তিনি যাঁদের নৈতিক শিক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের সামনে এমন দৃষ্টান্ত তাঁরই নিজের মর্যাদাকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে—এমনই প্রতিক্রিয়া স্থানীয়দের, ঘটনাটির প্রেক্ষিতে পরদিন বুধবার আবারও থানায় উপস্থিত হন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিংকর মণ্ডল এবং তাঁর সঙ্গীরা, এবার আরও সরব হয়ে তাঁরা বলেন,

“এই শিক্ষিকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা, এটা সাধারণ ভুল নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করা হয়েছে,” জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর যথেষ্ট সক্রিয়তা রয়েছে, তবে এই ধরনের পোস্ট পূর্বে কখনও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে দেখা যায়নি, ফলে এটি হ্যাকিংয়ের ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা পোস্ট—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, তবে শিক্ষকতার মতো পবিত্র পেশায় যুক্ত একজন মানুষ যদি এইভাবে রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রকাশ করেন, তবে তা সমাজের উপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা ভেবেই আতঙ্কে এলাকাবাসী, শিক্ষার জগতে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু তার প্রকাশ যদি এইভাবে অপমানসূচক হয়, তা হলে তা শুধুই শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব নয়, একরকম সামাজিক অপরাধ বলেই অনেকের অভিমত, বাগদা থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি, তাঁর বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া চাইলে কেউ দরজা খুলতেও চায়নি, যদিও পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, “উনি এমন কিছু করেননি, হয়ত অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে,”
অন্যদিকে শিক্ষামহলে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক, কেউ কেউ বলছেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু একজন শিক্ষক সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করলে তা শুধু অপমানজনক নয়, তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও এক ধরণের নেতিবাচক মানসিকতা ছড়াতে পারে,” এই ঘটনার পরে স্কুলের অভিভাবকরাও চিন্তিত, অনেকেই বলছেন, “আমাদের সন্তানরা যে শিক্ষকের কাছে পড়ছে, যদি তিনি এমন মন্তব্য করেন, তবে সেটা আদৌ সঠিক শিক্ষা কি না ভাবা দরকার,” স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে চুপ, তবে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে, পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি আরও বাড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে, এর আগে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর পোস্ট নিয়ে মামলা হয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে গ্রেফতারিও হয়েছে, ফলে এবারও অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তবে বিরোধী শিবির বলছে, “সরকারি চাকরিরত কেউ যদি সত্যিই কিছু বলেন, তবে তা নিয়ে তদন্ত হোক, কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার চেষ্টা যেন না হয়,” এই নিয়ে মানুষের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্ত মত, কেউ বলছেন,

“এটা স্পষ্ট অপরাধ, মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার অধিকার কারও নেই,” আবার কেউ বলছেন, “রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলেই যদি মামলা হয়, তবে গণতন্ত্র কোথায় দাঁড়াবে?” এদিকে রাজ্য রাজনীতিতে এই ঘটনা নতুন করে উত্তাপ জুগিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি, তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় স্তরে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া এমন এক শক্তি যা ইতিবাচক দিক যেমন দেখাতে পারে, তেমনই নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে সমাজে, তাই ব্যবহারকারীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি—এই বার্তাও উঠে এসেছে এই ঘটনায়, একজন শিক্ষক যদি এমন কাজে যুক্ত থাকেন, তবে ভবিষ্যতে রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তর হয়ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের জন্য কিছু নতুন গাইডলাইন তৈরি করতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসনের তরফ থেকে, পুরো ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বাগদা আজ যেন দ্বিধাবিভক্ত, একদিকে শিক্ষিকার প্রতি সহানুভূতি, অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অসম্মান—এই দুই বিপরীত মানসিকতা এক সঙ্গে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে জনমন, সত্যতা কী, তা তদন্তেই স্পষ্ট হবে, তবে এই ঘটনায় যে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক স্তরে আলোড়ন উঠেছে, তা সহজে থামবে না বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।