Saturday, April 12, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedতারাপীঠে নতুন নিয়ম, হোটেল ফতোয়ায় অতিষ্ঠ পর্যটকরা!

তারাপীঠে নতুন নিয়ম, হোটেল ফতোয়ায় অতিষ্ঠ পর্যটকরা!

Tarapeeth new rules, hotel fatwa later! : তারাপীঠ, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান, যেখানে মায়ের দর্শন এবং পুজো দিতে প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্তরা আসেন। তবে সাম্প্রতিক কিছু নতুন নিয়ম এবং হোটেলের আচরণ নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ গর্ভগৃহে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি, মন্দিরে ঢোকার আগে মোবাইল নির্দিষ্ট নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও এই নিয়মটি মূলত মন্দিরের নিরাপত্তা এবং পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে, এটি নিয়ে কিছু পর্যটক মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তবে, এই নিয়মের বাইরেও আরেকটি বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, তারাপীঠের বেশ কিছু হোটেল পর্যটকদের ওপর অলিখিত ফতোয়া জারি করেছে। হোটেল ঘর ভাড়া করার পর জানানো হচ্ছে, পুজো দেওয়ার জন্য হোটেলের নির্ধারিত পুরোহিত বা পান্ডাকে নিয়োগ করতে হবে। অন্যথায়, ঘর ভাড়া দেওয়া হবে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেক পর্যটক বাধ্য হয়ে হোটেলের শর্ত মেনে নিচ্ছেন, আবার অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষত যারা বহুদিন ধরে তারাপীঠে আসছেন, তারা নিজেদের পূর্ব পরিচিত পান্ডাকে দিয়ে পুজো দিতে না পারায় অসন্তুষ্ট।

এক স্থানীয় পর্যটক বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট পুরোহিতের কাছে পুজো দিই। এবার হোটেল থেকে বলল, তাদের নির্ধারিত পুরোহিত ছাড়া পুজো দেওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে আমরা হোটেল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।”

হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি অবশ্য জানিয়েছেন যে মন্দির কমিটির কাছ থেকে এই নিয়ে একটি মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, এখনো কোনো নির্দিষ্ট হোটেল বা পর্যটক এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। তিনি আরও বলেন, “পর্যটকদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে এমন কোনো অনৈতিক শর্ত না চাপানো হয়।”

তবে মন্দির কমিটির একাংশের দাবি, এই ধরণের হোটেলের সাথে কিছু পান্ডার যোগসাজশ রয়েছে। দালালদের মাধ্যমেই পর্যটকদের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কমিশনের বিনিময়ে ঘর ভাড়া করানো হয়। এছাড়া, মন্দির সংলগ্ন এলাকায় থাকার জন্য পর্যটকদের চাহিদা বেশি থাকায় হোটেল মালিকরা নিজেদের সুবিধার্থে এসব শর্ত চাপাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, হোটেল মালিকদের একাংশ বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবার মান উন্নত করতে তারা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এসব ব্যবস্থা পর্যটকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। মন্দির কমিটির তরফে বলা হয়েছে, পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং ধর্মীয় অভিজ্ঞতা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে।

অন্যদিকে, তারাপীঠে আসা এক পর্যটক বলেন, “আমরা এখানে মায়ের পুজো দিতে আসি। এই ধরণের শর্তের জন্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

Tarapith Tara Ma

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের ঘটনা দীর্ঘমেয়াদে তারাপীঠের পর্যটন শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারাপীঠের মত একটি তীর্থস্থানে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা যদি অপ্রিয় হয়ে ওঠে, তবে তারা অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। তাই প্রশাসন, মন্দির কমিটি এবং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

তারাপীঠ পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান যা প্রতিদিন বহু ভক্ত ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং তাদের ধর্মীয় অধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি এই ধরণের বিতর্ক এড়াতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং মন্দির ও হোটেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments