Wednesday, April 9, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিতামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সুপ্রিম কোর্টের তোপ, বিল আটকে রাখা অবৈধ

তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সুপ্রিম কোর্টের তোপ, বিল আটকে রাখা অবৈধ

Supreme Court slams Tamil Nadu Governor, says holding up bill is illegal :তামিলনাড়ু যেন আবার রাজনীতির উত্তাল ঢেউয়ে ভাসছে, আর সেই ঢেউয়ের কেন্দ্রে রয়েছেন রাজ্যের রাজ্যপাল আর এন রবি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এক গম্ভীর রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনা একেবারেই ‘অবৈধ’ এবং ‘স্বেচ্ছাচারী’। আর এখান থেকেই শুরু হয়েছে নতুন এক বিতর্ক, যেটা শুধু তামিলনাড়ু নয়, গোটা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে আলোড়ন তুলেছে। কারণ রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকা কতদূর, কোথায় তার সীমারেখা, সেই প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে। বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের ডিভিশন বেঞ্চ একেবারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, কোনো বিল যদি বিধানসভায় পাশ হয় এবং রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়, তাহলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যথাসম্ভব দ্রুত। যদি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, তাহলে এক মাসের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু তিন মাস, ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে বিল আটকে রাখা একেবারে ‘অসাংবিধানিক’। এই পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট যে শুধু তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে তা নয়, গোটা দেশে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে এক ধরনের নীতিগত দিশাও দেখিয়ে দিয়েছে।

1673260494 stalin

ঘটনার শুরু তখন, যখন তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের পক্ষ থেকে বিধানসভায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিল, যেখানে রাজ্য সরকার চেয়েছিল উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্যপালের থেকে নিয়ে তাদের হাতে আনা হোক। এই বিলটি রাজ্যপাল আর এন রবি সোজা প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু তাই নয়, আরও ৯টি বিল বা তো রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন, নয়তো ফাইল ফেলে রাখেন কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে। এতে করে কার্যত ওইসব বিল অচল অবস্থায় পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। এই নিয়ে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন ও তাঁর মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়, এমনকি রাজভবন ও সরকার ভবনের সম্পর্ক বেশ তলানিতে এসে ঠেকে। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন এই বিষয়ে বলেন, “রাজ্যপাল সাংবিধানিক মাথা হলেও তিনি কোনওভাবেই নির্বাচিত সরকারকে থামানোর অধিকার রাখেন না। উনি আমাদের উন্নয়নকে আটকে রাখছেন।”

এই নিয়ে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। আদালত তাতে শুধু রায়ই দেয়নি, একপ্রকার রাজ্যপালদের জন্য আইনি সংবিধান বইয়ের দিকনির্দেশ তৈরি করে দিয়েছে। আদালত বলেছে, রাজ্যপাল যদি মনে করেন কোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন, তবে তা যথাসম্ভব দ্রুত পাঠাতে হবে। কিন্তু বিলকে বছরের পর বছর ফেলে রাখা সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধের শামিল। তারা আরও বলে, “রাজ্যপাল রাজনৈতিক মতাদর্শ দূরে সরিয়ে রেখে কাজ করবেন। তিনি যেন সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে স্বচ্ছতা বজায় রাখেন।”

এই রায়ের প্রতিক্রিয়া যেমন ছিল তামিলনাড়ুতে, তেমনি অন্য রাজ্যগুলোতেও শুরু হয়েছে আলোচনা। কারণ বাংলায়, কেরালায়, মহারাষ্ট্রেও এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যেখানে রাজ্যপাল ও নির্বাচিত সরকার মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মধ্যেও যেমন টানাপোড়েন চলেছে, এই রায় সেই দিকেও আলোকপাত করেছে।

রাজনীতিবিদ ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ এই রায় শুধু তামিলনাড়ুর জন্য নয়, গোটা দেশের কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল হলেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, কিন্তু তাঁর ভূমিকা একপ্রকার সাংবিধানিক মর্যাদার, যেখানে তিনি নির্বাচন করা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন, বাধা তৈরি করবেন না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে অনেক রাজ্যপাল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছেন এবং রাজ্যের নীতিগত সিদ্ধান্তে থেমে যাচ্ছে বহু উন্নয়ন প্রকল্প, বিল ও প্রশাসনিক কাজ।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই রায় শুধু তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের জন্য নয়, এটি একটি বার্তা দেশের প্রতিটি রাজ্যপালের কাছে, যে তাঁরা যেন সংবিধানের বাইরে না যান।” অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রায় স্বস্তি দিয়েছে, বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে যারা দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক জানান, “এই রায়ের পর আমরা আশা করছি বিলগুলি কার্যকর হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দ্রুত শুরু হবে।”

এই পুরো ঘটনার মূল চরিত্র রাজ্যপাল আর এন রবি একজন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, যিনি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি তার স্পষ্টবাদিতা ও সরকারের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জন্য পরিচিত। এর আগে নাগাল্যান্ডেও তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন।

এই বিতর্ক যে এখানেই থেমে যাবে না তা অনেকেই মনে করছেন। কারণ রাজ্য ও রাজ্যপালের সম্পর্কটা এখন একদম পাতলা দড়ির উপর ভারসাম্য রাখার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ঢুকে পড়লে সেখান থেকে বেরনো কঠিন, আর সেটা কেবল প্রশাসনিক কাজকর্ম নয়, মানুষের উপরেও সরাসরি প্রভাব ফেলে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সেই দিকেই একটা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে – সংবিধানকে সামনে রেখে চলুন, রাজনীতি নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments