Sunlight breaks through clouds, a sigh of relief in the Sundarbans:সুন্দরবনের আকাশে গত কয়েকদিন ধরে যে অদ্ভুত চেপে বসা অন্ধকার মেঘের ঘনঘটা ছিল, তা যেন এলাকা জুড়ে এক আতঙ্কের ছায়া ফেলে রেখেছিল। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশ মেঘে ঢাকা, গায়ে হালকা শিরশিরে বাতাস, আর তারই ফাঁকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার খবর কানে এলে সুন্দরবনের মানুষেরা যেন দম বন্ধ হয়ে আসা একটা সময়ের মধ্যে আটকে গিয়েছিল। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আগেই জানিয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে, যা ঘূর্ণাবর্তের রূপ নিতে পারে, আর সেটি যদি সুন্দরবনের দিকে আসে, তাহলে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবেই। এই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই স্থানীয় মানুষজন সতর্ক থাকতে শুরু করেছিলেন—বাড়ির টালির ছাদ মজবুত করা, দরকারি জিনিস এক জায়গায় রাখা, মাছের ঘের থেকে মাছ তোলার চেষ্টা, গ্রামের পুকুর থেকে নৌকা বের করে প্রস্তুত রাখা—সবই চলছিল। সুন্দরবনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত এই আতঙ্ক যেন নিঃশ্বাস আটকে রাখছিল।কিন্তু শুক্রবার সকালে হঠাৎই পরিস্থিতির বদল। আকাশের ঘন মেঘের পর্দা ফুঁড়ে সূর্যের সোনালি আলো যখন মাটিতে এসে পড়ল, তখন যেন সুন্দরবনের মানুষদের বুকের মধ্যে জমে থাকা বোঝা হালকা হয়ে গেল।
অনেকদিন পর সূর্যের আলোয় ঝলমল করে উঠল মাটির রাস্তা, কাঁচা বাড়ির চাল, নদীর জল, আর তারই সঙ্গে মানুষের মুখের হাসি। সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বাসিন্দা মদন মণ্ডল বলেন, “গত কদিন ধরে তো ভয়ে ছিলাম, কখন জানি আবার ঝড় আসে, নদী ফুলে ওঠে, ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ সকালে রোদ দেখে মনে হলো বেঁচে আছি, এই বাঁচাটাই এখন বড় পাওয়া।” একই রকম কথা বললেন সাতজেলিয়ার কৃষক কৃষ্ণপদ দাস, “আলিপুর থেকে খবর আসছিল নিম্নচাপের, তাই তো সবাই মাঠের ধান তুলে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আজকে যখন রোদ উঠল, মনে হচ্ছে ধানটুকু শুকোতে পারব, ফসল নষ্ট হবে না।” সুন্দরবনের মানুষের জীবন মানেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই—মাঝে মাঝেই বন্যা, কখনও ঝড়, কখনও নদীভাঙন, তার মধ্যেই জীবনের সংগ্রাম। তাই মেঘ সরে গেলে, রোদের আলো ফুটলে মনে হয় যেন নতুন আশার আলো ফিরে এসেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আপাতত নিম্নচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে, তাই এখনকার মতো বড়সড় ঝড়ের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, কারণ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা এখনও রয়েছে, আর হালকা দমকা হাওয়াও বইতে পারে। সুন্দরবনের বিভিন্ন ব্লকে প্রশাসনও তৎপর ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক বলছেন, “আমরা প্রতিটি ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত রেখেছিলাম, মাইকিং করে মানুষকে সাবধান করা হয়েছিল। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে নজর রাখছি।” সুন্দরবনের মানুষ, যারা প্রকৃতির ভয়ে দিন কাটায়, তাদের জন্য এই সাময়িক স্বস্তি একরকম নতুন করে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে।