Sukanta majumder on mla of kalna : কালনা, পূর্ব বর্ধমানের রাজনৈতিক মঞ্চে আরও একবার উত্তাপ ছড়ালো বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই এতে জড়িয়ে গিয়েছে ব্যক্তি আক্রমণের ছোঁয়া। সম্প্রতি কালনার পুরোশ্রী মঞ্চে বিজেপির সদস্যতা অভিযান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সরাসরি আক্রমণ শানালেন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের দিকে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই কাটোয়ার এক সভায় সুকান্ত মজুমদার কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগকে “মার্ডার কেসের আসামি” বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দেবপ্রসাদ বাগ সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেননি সুকান্ত মজুমদার। বরং কালনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি আবারও বলেন, “যার মান আছে তারটা নিয়ে টানাটানি করা যায়। তোর তো ব্যাটা কিছুই নেই।”
এই মন্তব্যে কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমি বাগদি সম্প্রদায়ের ছেলে, সেই কারণেই বারবার আমার উপর এমন আক্রমণ করা হয়।” তার বক্তব্যে সমাজের বঞ্চিত এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞার অভিযোগ উঠে আসে, যা রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। দেবপ্রসাদ বাগের মতে, এ ধরনের আক্রমণ আসলে তার সম্প্রদায়কে হেয় করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
এই ঘটনার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। তারা মনে করছেন, দুই দলের নেতারাই স্থানীয় সমস্যা থেকে নজর সরিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণে মত্ত হয়েছেন। কালনার সাধারণ মানুষ, যাঁরা রোজকার জীবনের চাহিদা ও সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান চান, তাঁদের চোখে এই ধরনের রাজনৈতিক আক্রমণ বিশ্বাসের সংকট তৈরি করছে। স্থানীয় কিছু মানুষ বলছেন, “নেতারা যদি আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ না করেন, তাহলে আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তিটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”
সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্যে অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের আদর্শকে তীব্রভাবে আক্রমণ করা হয়। তিনি বলেন, “তৃণমূল শুধু স্লোগান ভিত্তিক দল, ‘মা মাটি মানুষ’ দিয়ে আসলে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে এবং কাঠমানি খাওয়ার জন্যই সক্রিয়।” পাশাপাশি, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিএইচডি ডিগ্রিকে এবং তৃণমূলের তরুণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমবিএ ডিগ্রিকে ভুয়ো বলে কটাক্ষ করেন। তিনি আরও বলেন, “মিথ্যে কথা বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।”
এদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথার সূত্র ধরে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রচারের অংশ হিসেবে অন্নপূর্ণা যোজনার মাধ্যমে প্রতিটি মহিলাকে তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সদস্য সংগ্রহ করা হবে, আর অন্নপূর্ণা যোজনায় প্রত্যেক মহিলা উপকৃত হবেন।” এই প্রতিশ্রুতি অনেকের মধ্যেই আশার সঞ্চার করেছে। তবে বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই প্রতিশ্রুতিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছেন এবং বলছেন এটি শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতির অংশ।
এই ঘটনা পর্যালোচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দলের নেতাদের এই ধরনের বক্তব্য সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের উচিত জনগণের কল্যাণে কাজ করা, সেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারানোর আশঙ্কা বাড়ছে। এ ধরনের আক্রমণমূলক বক্তব্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবনতি ঘটাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে রাজনীতির গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
কালনার মানুষ এবং সমগ্র পূর্ব বর্ধমানের জনগণের আশা, রাজনৈতিক নেতারা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে স্থানীয় সমস্যাগুলি সমাধানের পথে এগিয়ে আসবেন। কালনার বাজার এলাকায় এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “যদি নেতারা আমাদের সাধারণ মানুষের সমস্যার প্রতি নজর দিতেন, তাহলে আজ এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতো না।” সাধারণ মানুষ এখন স্থানীয় নেতা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আছে, তারা কবে তাদের সমস্যাগুলি গুরুত্ব সহকারে নেবেন।