Students not coming to school due to fear of snakes, classes closed:গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জল জমে রয়েছে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র। একদিকে যেমন রাস্তাঘাট জলমগ্ন, অন্যদিকে তেমনি জল ঢুকে পড়েছে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ঠিক এই বৃষ্টির মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার সুন্দরপুর সাতবেড়িয়া বনগ্রাম এলাকার কালীচরণ হাওলাদার বালিকা বিদ্যালয়ে এক অভূতপূর্ব সমস্যা তৈরি হয়েছে — সাপের আতঙ্ক। শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করার বদলে এখন বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা আতঙ্কে প্রহর গুনছেন, কারণ স্কুল চত্বরজুড়ে বারবার দেখা মিলছে বিষধর সাপের।উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর সুন্দরপুর সাতবেড়িয়া বনগ্রাম কালীচরণ হাওলাদার বালিকা বিদ্যাপীঠে মোটামুটি ১৩০ জন ছাত্রী পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন করে। কিন্তু গত কয়েকদিনে স্কুলের বিভিন্ন স্থানে — যেমন মিড ডে মিলের ঘর, স্টাফ রুম, এমনকি ছাত্রীদের ক্লাসরুমেও দেখা গেছে একের পর এক বিষধর সাপ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বনদপ্তরের কর্মীরা এসে দশটি বিষধর সাপ উদ্ধার করেছেন স্কুল চত্বর থেকে। এর মধ্যে কেউটে, গোখরো এবং ধোঁয়াটে সাপও রয়েছে বলে জানা গেছে।এই ঘটনার জেরে স্কুলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে ছাত্রীদের মধ্যে। অভিভাবকেরা এখন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে নিয়মিত পড়াশোনা। দিন যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি ততই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
স্কুলের গেট খুলে থাকলেও প্রতিদিন ছাত্রীর সংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারেই হাতে গোনা। এই অবস্থায় স্কুল কার্যত বন্ধ বললেই চলে।বনদপ্তর ইতিমধ্যেই স্কুলে কয়েক দফায় সাপ উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনই নতুন করে সাপ দেখা যাওয়ায় আতঙ্কের শেষ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা জানান, “বনদপ্তর সাহায্য করছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিন নতুন করে সাপ দেখা যাচ্ছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে আমরা কীভাবে পড়াশোনা করাব?”স্থানীয় শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা শিক্ষা আধিকারিকের নজরে বিষয়টি আনা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি স্কুল চত্বরে সাপ প্রতিরোধের জন্য ক্লিনিং ও ফগিং-এর মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ভয়ে জর্জরিত। দশম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, “ক্লাসে বসে পড়তে গেলেই মনটা অস্থির হয়ে যায়। কোথা থেকে যেন একটা সাপ এসে পড়বে মনে হয়।” আরেক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে মাধ্যমিক দিবে আগামী বছর। কিন্তু এখন তো স্কুলেই যেতে পারছে না। এইভাবে চললে ওর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, লাগাতার বৃষ্টিতে এলাকার জলনিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খোলা ড্রেন, পুকুরের জল উপচে পড়ছে রাস্তায়।

ফলে সাপগুলো আশ্রয় খুঁজতে ঢুকে পড়ছে স্কুল-ঘরে। দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে পরিস্কার না হওয়ায় স্কুল প্রাঙ্গণও হয়ে উঠেছে সাপের আদর্শ বাসস্থান।এই ঘটনা কেবল একটি স্কুলের সমস্যা নয়, বরং বৃহত্তর এক পরিকাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিফলন। জল জমে থাকা, অপরিষ্কার নর্দমা, এবং সঠিকভাবে স্কুল চত্বর রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এই ধরনের বিপদের মূল কারণ। একটি সরকারি বিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তোলে।এছাড়া এখন মাধ্যমিকের প্রস্তুতির সময়। এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। অনলাইনে পড়ানোর মতো পরিকাঠামোও এই স্কুলে নেই। ফলে ছাত্রীদের পড়াশোনায় চূড়ান্ত ব্যাঘাত ঘটছে।স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের উচিত অবিলম্বে স্কুলটিকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাপমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যেমন, স্কুল চত্বরের চারপাশে সুরক্ষা দেওয়াল, নিয়মিত ঘাস কাটার ব্যবস্থা, ফগিং, ও বৃষ্টির জল বের করার জন্য নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন।এই সমস্যা শুধু বনগ্রামের এই একটি স্কুলে সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যের অন্যান্য অনেক গ্রামীণ স্কুলেও একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বর্ষাকালে। তাই রাজ্য জুড়ে একটি স্বচ্ছ পরিকল্পনা থাকা জরুরি।