Student dies after getting entangled in electric wire in Agra’s Pan Boro:পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পান বরোজে অবৈধ ইলেকট্রিক তারে জড়িয়ে মৃত্যু হলো এক কিশোর ছাত্রের। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই জীবন থেমে গেল সন্তোষ দাসের, যিনি জেড়থান গয়া প্রসাদ বিদ্যাপীঠের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র ছিলেন। নিরীহ ছাত্রের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, প্রতিবেশী, এমনকি এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। কারণ, এই মৃত্যু শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক চরম অবহেলার পরিণাম।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাচাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন দাস নিজের পান বরোজের চারপাশে অবৈধভাবে ইলেকট্রিক তার বিছিয়ে রেখেছিলেন, যাতে কেউ তার জমির কাছাকাছি না আসতে পারে। কিন্তু এই অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগই কেড়ে নিল এক তরতাজা কিশোরের প্রাণ। ঘটনার দিন সন্তোষ তার জমির বাদামক্ষেত থেকে হনুমান তাড়িয়ে ফিরছিল, তখনই সে পান বরোজের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায় এবং সেই অভিশপ্ত ইলেকট্রিক তারে জড়িয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই বিকট শব্দ হয়, ছেলেটির শরীর থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা দৌড়ে এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ছেলেটি মারা গেছে।সন্তোষের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার এবং গ্রামবাসীরা চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিবারের অভিযোগ, পান বরোজের মালিক নিরঞ্জন দাস সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছিলেন, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা থানায় গিয়ে নিরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন এবং দোষীর শাস্তির দাবি জানান।সন্তোষের জেঠু বেনি মাধব দাস বলেন, “আমার ভাইপো তো কিছুই জানত না, সে তো শুধু নিজের জমিতে কাজ করছিল! ও কীভাবে জানবে যে, পাশের পান বরোজে এমন মরণফাঁদ পাতা আছে? এটা তো একেবারেই খুন! আমরা বিচার চাই।”স্থানীয় বাসিন্দা রতন রাউল বলেন, “আজ একজন ছাত্র মারা গেল, কাল যদি অন্য কেউ এইভাবে মারা যায়?
প্রশাসন কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে? এই পান বরোজের মালিকের কঠোর শাস্তি চাই।”তবে এই ঘটনার পর আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে, যা মৃতের পরিবারের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে। যখন সন্তোষের পরিবার এবং গ্রামের লোকজন হাসপাতালে তাঁর মৃতদেহ নিতে যান, তখন দেখেন দেহ পচে রক্ত বের হচ্ছে এবং চারপাশে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, মর্গের এয়ার কন্ডিশনার নষ্ট হয়ে গিয়েছে, যার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে।এই ঘটনায় পরিবার আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং হাসপাতালের সামনে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। থানার এ এস আই বুদ্ধদেব মান্না নিজে উপস্থিত থেকে পরিবারকে আশ্বাস দেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।এগরা হাসপাতালের সুপার সমীর আচারিয়া বলেন, “পরিবারের অভিযোগ আমরাও শুনেছি। আমরা তদন্ত করছি যে, কেন মর্গের এ সি কাজ করছিল না। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”অন্যদিকে, এগরা থানার আইসি অরুণ খান জানান, “পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আমরা তদন্ত শুরু করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এই ঘটনার পর গোটা এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। একদিকে যেমন সন্তোষের পরিবারের কান্না থামছে না, অন্যদিকে গ্রামের মানুষজন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, অবৈধভাবে ইলেকট্রিক তার বিছিয়ে রাখা হলো, অথচ প্রশাসন আগে কিছুই জানল না? কেন আগে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?একজন প্রতিবেশী বলেন, “প্রশাসন যদি আগে নজর দিত, তাহলে হয়তো আজ সন্তোষ বেঁচে থাকত। পান বরোজের চারপাশে এভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু কেউ কিছু বলল না কেন?”এদিকে, এই ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে গিয়ে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে কোথাও বিদ্যুতের সংযোগ রাখা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।