Storm forecast in the district, easing the discomfort of the scorching heat:টানা কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহে যখন রাজ্যের মানুষ কার্যত হাঁসফাঁস করে চলেছে, ঠিক তখনই আশার আলো দেখাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। গরমে পুড়ে যাওয়া রাজ্যবাসীর জন্য স্বস্তির খবরে জানান দেওয়া হল, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে একাধিক জেলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আগামী কয়েক দিন। বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে এই ঝড়-বৃষ্টির দাপট, চলবে রীতিমতো রবিবার-সোমবার অবধি। আবার এই ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎও দেখা দিতে পারে। তবে শুধু স্বস্তি নয়, আবহাওয়া দফতর সতর্কও করেছে কারণ এই দুর্যোগের জেরে জনজীবনে বিপর্যয় নামতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকটা যেন ধাঁধার মতোই, দিনের শুরুতে রোদের তেজে যখন ঘরে বসেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে, তখন দুপুর গড়াতেই শুরু হচ্ছে আকাশের মেজাজ বদল, কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ, তার পর আচমকা হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাপটা—গল্পের মতোই ঘটছে বাস্তবের মঞ্চে।আলিপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বুধবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৫৪ থেকে ৯১ শতাংশ, যার ফলে তাপমাত্রা যত না বেশি, অস্বস্তি তার চেয়েও বেশি। তবে এই অস্বস্তির দিন গোনা হয়তো এবার শেষ হতে চলেছে, কারণ বুধবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। পশ্চিম মেদিনীপুর, নদীয়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, এবং মুর্শিদাবাদ জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। শুধু তাই নয়, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার এই তিন জেলায় বড়সড় বৃষ্টিপাত হতে পারে, আর সেই সঙ্গে দুর্যোগের আশঙ্কাও।
উত্তরবঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দিনভর আকাশে মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে, কখনও হালকা বৃষ্টি তো কখনও দমকা হাওয়ার দাপট। কোচবিহারের স্থানীয় বাসিন্দা প্রণব দাস জানান, “গত কয়েকদিন ধরে অসম্ভব গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। আজ সকাল থেকেই বাতাসে একরকম ভেজাভাব রয়েছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে।” তাঁর এই মন্তব্যকেই সমর্থন করছেন এলাকার কৃষক সুভাষ বর্মণ, যিনি বললেন, “বৃষ্টি হলে ধান রোপার জন্য ভালো হবে, তবে বেশি ঝড় হলে আবার ক্ষেতের ক্ষতিও হতে পারে।” অর্থাৎ এই বৃষ্টি যেমন কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে, তেমনই অন্য দিকে অতিবৃষ্টির প্রভাবে জমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের শহরাঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে। কলকাতায় অনেক দিন বাদে বুধবার বিকেলে দেখা গেছে হালকা মেঘ, আর সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরমের মধ্যেও হঠাৎ হাওয়ার ঝটকা। রাস্তাঘাটে মানুষজন বলছেন, “দুপুরে বের হওয়া যায় না, গাড়ির ভেতর বসে থাকলেও ঘেমে একসা। তবে সন্ধের দিকে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।” তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে জল জমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বেহালা, সাঁতরাগাছি, গড়িয়া, বাগুইআটি বা উত্তর কলকাতার কিছু এলাকা।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি না হলেও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ এবং জলীয়বাষ্পে ভরপুর বাতাস একত্রিত হয়ে তৈরি করছে দুর্যোগের আবহ।
এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে অন্তত আগামী রবিবার পর্যন্ত। তবে শনিবার ও সোমবারের দিকে এই বৃষ্টির প্রবণতা একটু কমে আসতে পারে, কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হবে না। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া, কর্মরত মানুষজন, কৃষক এবং বাজার ব্যবসায়ীদের জন্য এই আবহাওয়া একদিকে যেমন স্বস্তির, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জিংও বটে।বিদ্যুৎ দপ্তর থেকেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। গাছের নিচে না দাঁড়ানো, খোলা জায়গায় মোবাইল ব্যবহার না করা, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা—এই ধরনের সাধারণ সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে পুরসভা ও পৌরসভার তরফে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে অতিবৃষ্টির সময় জল জমে না থাকে।এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসনও সচেতন। দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ের প্রভাবে কোথাও গাছ পড়ে গেলে বা রাস্তায় জল জমে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।