Stomach problems during monsoon? Home remedies will provide relief: বর্ষাকাল বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অংশ। ঝমঝম বৃষ্টির দিনে এক থালা গরম খিচুড়ি, পাশে ভাজা বেগুন, আর টাটকা ইলিশ—এ যেন রসনার অমোঘ আহ্বান। তবে এই রসনাতৃপ্তির মুহূর্তেই পা রাখে অস্বস্তিকর এক বাস্তবতা—পেটের সমস্যা।
বর্ষার আবহাওয়ার আদ্রতা, রাস্তার খাবারের প্রতি আকর্ষণ, আর জলবাহিত জীবাণুর আক্রমণে এই সময় হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস, ফুড পয়জনিং, এমনকি বদহজমের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে। অনেকেই সামান্য সমস্যা হলেই ওষুধের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু প্রতিটি ওষুধের সঙ্গেই থাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি। এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া উপায়গুলি হয়ে উঠতে পারে নিরাপদ এবং কার্যকর একটি বিকল্প।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে লাগাতার বৃষ্টি। স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময় জলের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগের প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করেই বেড়েছে। কলকাতা, হাওড়া, নদীয়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, এমনকি উত্তরবঙ্গেও রুগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকালে হজমের সমস্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির হার। তাছাড়া, অনেকেই বৃষ্টির দিনে বাইরের তেলঝাল খেতে ভালোবাসেন—যার ফলেই শরীর সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ এখন ঘরোয়া প্রতিকারে ভরসা রাখছেন। আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতে এমন অনেক উপায় আছে যেগুলি সহজলভ্য, নিরাপদ এবং কার্যকর। এমনই তিনটি উপায় আজকাল সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।প্রাকৃতিক উপাদান আদা এবং লেবু—দুটোই হজমে সহায়ক। এক চামচ আদা থেঁতো করে ফুটন্ত জলে দিয়ে সেটি ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে তাতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু’বার খালি পেটে খেলে হজমশক্তি বাড়ে ও পেট হালকা থাকে। পেটের অস্বস্তি, গ্যাস, বা ফাঁপার সমস্যা থেকেও অনেকটা রেহাই মেলে।বৃষ্টির দিনে পরিষ্কার পানীয় জলের অভাব থেকেই ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বাড়ে। অন্যদিকে, অপরিষ্কার জল থেকে আসে জীবাণু। এই অবস্থায় জিরে ও ধনে সেদ্ধ করে ঠান্ডা করা জল পেটের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এক চামচ করে জিরে আর ধনে দুই কাপ জলে ফুটিয়ে, সেটি ছেঁকে ঠান্ডা করে দিনে ৩-৪ বার অল্প অল্প করে পান করলে হজম সহজ হয়। এতে গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা অনেকটাই কমে।তুলসী পাতাকে ভারতীয় ঘরোয়া চিকিৎসায় “ঔষধি রানি” বলা হয়। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়ায় পেটে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ৫-৬টি তুলসী পাতা পেস্ট করে এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং হজমও ভাল হয়।স্বাস্থ্য দপ্তর বর্ষা শুরুর আগেই জলবাহিত রোগ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল। সরকারি হাসপাতালগুলিতে গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস ও ফুড পয়জনিংয়ের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, “সাধারণ মানুষ যদি ঘরোয়া স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখেন, তাহলে বর্ষার অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।”

আধুনিক চিকিৎসার অগ্রগতির যুগেও মানুষ ঘরোয়া প্রতিকারে ফিরে আসছে তার দুটি মূল কারণ—সহজলভ্যতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা কম। আদা, লেবু, তুলসী, ধনে কিংবা জিরে—সব উপাদানই সাধারণ রান্নাঘরে মজুত থাকে। সেই সঙ্গে এগুলির কার্যকারিতাও প্রমাণিত।বর্ষার সময় শরীর আর্দ্রতাজনিত নানা সমস্যায় ভোগে, যার প্রভাব পড়ে হজমের ওপর। তাই পেটের সমস্যার নিরসনে এই সহজ উপায়গুলি কার্যকর হতে পারে—বিশেষ করে প্রাথমিক ধাপে।স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, বর্ষাকালে প্রতিটি পরিবারেই একটি ‘প্রথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতা’ কিট থাকা উচিত—যার মধ্যে ওষুধের পাশাপাশি থাকবে ঘরোয়া প্রতিকার সম্বন্ধে জ্ঞান।স্কুল স্তর থেকে শুরু করে পাড়ার ক্লাবগুলিতে বর্ষাকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচার করলে এই সমস্যাগুলি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
এছাড়াও, খাবার ও পানীয় জলের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। জল ফুটিয়ে খাওয়া, বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা এবং রান্নার আগে ভালো করে হাত ধোয়ার অভ্যাস বর্ষাকালে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর।বৃষ্টি মানেই আনন্দ, ছুটির আমেজ, খিচুড়ির গন্ধ আর প্রকৃতির এক ভিন্ন সৌন্দর্য। তবে সেই আনন্দের মাঝখানে যদি পেটের সমস্যা জেঁকে বসে, তবে তা হয়ে ওঠে বিরক্তিকর।এই পরিস্থিতিতে সহজ কিছু ঘরোয়া টোটকা যদি রক্ষা করে আপনার ও আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য, তাহলে কেন নয়? বর্ষার দিনে খানিকটা সতর্কতা আর এই ঘরোয়া প্রতিকারই হতে পারে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।