Tuesday, May 13, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedভারত পাকিস্তান উত্তেজনায় শেয়ারবাজারে ধস

ভারত পাকিস্তান উত্তেজনায় শেয়ারবাজারে ধস

Stock market plunges amid India-Pakistan tensions: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ৯ মে শুক্রবার সকালে দেশের শেয়ারবাজারে দেখা গেল এক চরম ভয়াবহ ধস। যেন যুদ্ধের আতঙ্কে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের আর্থিক অঙ্গন। দিনের শুরুতেই মুম্বইয়ের সেনসেক্স ৯৭১.৪২ পয়েন্ট বা ১.২১ শতাংশ পড়ে নেমে আসে ৭৯,৩৬৩.৩৯-এ, অন্যদিকে নিফটি ৩১৯.০৫ পয়েন্ট বা ১.৩১ শতাংশ পড়ে ঠেকে ২৩,৯৫৪.৭৫-এ। বিনিয়োগকারীদের মনে একরকম ধাক্কা লাগে যখন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে একাধিক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যদিও ভারতীয় সেনা বাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে সমস্ত আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং কয়েকটি ড্রোনকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে, তবে আতঙ্ক থামেনি। জম্মু, জলন্ধর, হোশিয়ারপুর, জয়সালমেরের মতো শহরে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে এবং দিল্লিতে জারি হয়েছে চরম সতর্কতা। এই পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে প্রবল বিক্রির ঢেউ তোলে, যার ফলে প্রায় ₹৫ লক্ষ কোটি টাকার বাজারমূল্য নিমেষে উবে যায়। NSE-এর সবকটি ১৩টি সেক্টোরাল সূচকই ছিল রক্তরাঙা লাল, যা বলে দেয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রা কতটা বেশি। মোট ২৬২৬টি স্টক পড়ে যায়, মাত্র ৪৩১টি স্টক লাভের মুখ দেখে, এবং ১০৩টি স্টক কোনও পরিবর্তন ছাড়াই রয়ে যায়। ইন্ডিয়া VIX, অর্থাৎ বাজারের অনিশ্চয়তার সূচক পৌঁছে যায় ২১.০১-এ, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। CapGrow Capital-এর সিনিয়র অ্যানালিস্ট সন্দীপ গোয়েল জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সম্ভাবনা যতক্ষণ না পুরোপুরি প্রশমিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজার এইরকমই অস্থির থাকবে।” শুধু শেয়ারবাজার নয়, মুদ্রাবাজারেও এর ছাপ স্পষ্ট। মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় রুপির দাম আজ ১২ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৮৫.৮৪-এ। ব্লুমবার্গ-এর হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে এখনও পর্যন্ত রুপির পতন হয়েছে ১.৪৭ শতাংশ। এতে আমদানিকারক সংস্থাগুলির উপর আর্থিক চাপ আরও বেড়েছে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নিফটির জন্য সাপোর্ট লেভেল হতে পারে ২৪,০০০, ২৩,৮০০ এবং ২৩,৭০০-এ। রেজিস্টেন্স রয়েছে ২৪,৩০০, ২৪,৪০০ এবং ২৪,৫০০-এ। ব্যাঙ্ক নিফটির ক্ষেত্রেও সাপোর্ট ৫৪,০০০-এ এবং রেজিস্টেন্স ৫৪,৬০০ ও ৫৪,৯০০-এ ধরা হচ্ছে। তবে এক আশার কথা, এমন অস্থিরতার মধ্যেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৬ দিন ধরে টানা শেয়ার কিনে চলেছেন। শুধু ৮ মে একদিনেই তাঁরা ₹২,০০৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছেন। অন্যদিকে, দেশীয় ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা এই সময়ে ₹৫৯৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। স্টক বিশ্লেষক সৌম্যদীপ রায় বলেন, “FII-রা যদি এমন পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগে আগ্রহী থাকে, তাহলে বোঝা যায় ভারতের অর্থনীতির প্রতি তাদের আস্থা এখনো অটুট। এই বিশ্বাসই ভবিষ্যতে বাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।” দেশের মধ্যবিত্ত, যারা মিউচুয়াল ফান্ড বা সরাসরি স্টকে নিয়মিত SIP করেন, তাঁদের মধ্যে এই ধস একপ্রকার মনোবৈকল্য তৈরি করেছে। উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলশিক্ষক সৌরভ দে বলেন, “গত দু’বছর ধরে আমি SIP করছি, কিন্তু আজকে যে ভাবে একসাথে সব ভেঙে পড়ল, সেটা দেখে ভয় পেয়ে গেছি।” তবে ফাইনান্সিয়াল প্ল্যানাররা পরামর্শ দিচ্ছেন আতঙ্কিত না হয়ে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের দিকে নজর দিতে। এদিকে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন না ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নিরসন হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা বজায় থাকবে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, এই ধসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে ভবিষ্যতের বড় লাভের সম্ভাবনাও। কারণ যেসব শেয়ারের দাম হঠাৎ কমে গেছে, তা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হারে ফিরে আসতে পারে, যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সব মিলিয়ে, যুদ্ধংদেহী পরিবেশ শুধু সীমান্তে নয়, অর্থনীতিতেও কাঁপন ধরিয়েছে। এখন সকলের নজর সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে। শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে কিনা, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার উপর।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments