Special arrangements on the occasion of Ram Navami in Raniganj রানীগঞ্জে এ বছর রামনবমী উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP)। প্রতি বছরের মতো এবারও এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে বিরাট আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ বছর আয়োজনের মাত্রা আরও বড় হয়েছে, কারণ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় ৩৬টি পূজো মণ্ডপ থেকে বিশেষ শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। তার পাশাপাশি পাঠ, ধর্মীয় আলোচনা, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
এই উপলক্ষে রানীগঞ্জের সারা ভবনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে পরিষদের নেতারা জানান, রামের আদর্শ এবং রামরাজ্যের স্বপ্ন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এই মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

একদিনের অনুষ্ঠান নয়, চলবে পুরো মাস
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ স্পষ্ট জানিয়েছে, এটি শুধুমাত্র একটি দিনের অনুষ্ঠান নয়। রামনবমীর পরেও এই আয়োজন চলবে। আগামী ৬ই এপ্রিল পুরুষোত্তম প্রভু রামের পুজো অনুষ্ঠিত হবে, এবং এরপর রামনবমী থেকে হনুমান জয়ন্তী পর্যন্ত “রাম মহোৎসব” পালন করা হবে। অর্থাৎ, পুরো এপ্রিল মাসজুড়েই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, যজ্ঞ, হোম, শোভাযাত্রা ও অন্যান্য আয়োজন চলবে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হল সমাজে রামের ভাবধারা প্রচার করা। আজকের সমাজে রামরাজত্বের মতো ন্যায়, সত্য এবং ধর্মনিষ্ঠ শাসন প্রয়োজন।”

শহরজুড়ে ধর্মীয় উন্মাদনা, রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ
রামনবমীর দিন সকাল থেকেই রানীগঞ্জের বিভিন্ন পূজো মণ্ডপ থেকে ভক্তদের ভিড় দেখা গেছে। এরপর দুপুরের দিকে বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। রামের পতাকা হাতে, ঢাক-ঢোলের বাজনা আর “জয় শ্রীরাম” ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা শহর।
শোভাযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ ছিল –
- রাম, সীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমানের সাজে সজ্জিত শিল্পীদের অভিনয়
- বিশাল আকৃতির রামের প্রতিকৃতি
- ধর্মীয় সংগীত এবং কীর্তন
- তলোয়ার ও গদার মতো ঐতিহ্যবাহী অস্ত্রের প্রদর্শনী
স্থানীয় বাসিন্দা রাকেশ আগরওয়াল বললেন, “আমি প্রতি বছর এই শোভাযাত্রায় অংশ নিই। কিন্তু এ বছর আয়োজন আরও বড় এবং সুন্দর হয়েছে। রামের আদর্শ আমাদের জীবনে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কড়া
ধর্মীয় সমাবেশ ও বিশাল শোভাযাত্রা হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। রানীগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।
এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করেছি যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শোভাযাত্রা সম্পন্ন হয়। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
ধর্মীয় গুরুত্ব ও সামাজিক বার্তা
রামনবমী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক। পুরাণ মতে, এই দিনেই ভগবান রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার জীবন আদর্শে ভরপুর ছিল। রানীগঞ্জের বিশ্ব হিন্দু পরিষদ চায়, মানুষ রামের আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে সত্য, ন্যায় এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করুক।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক নেতা জানিয়েছেন, “রাম কেবল একজন ঐতিহাসিক চরিত্র নন, তিনি এক আদর্শ। রামের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি কীভাবে সততা এবং ন্যায়ের পথে চলতে হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।”

ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ধর্মীয় উৎসব মানেই শহরের অর্থনীতিতে একটা বড়সড় প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে মিষ্টির দোকান, প্রসাদ বিক্রেতা, পোশাকের দোকান, পতাকা ও সাজসজ্জার সামগ্রী বিক্রেতারা ভালো ব্যবসা করেছেন।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী সঞ্জয় দাস বললেন, “রামনবমীর সময় আমাদের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। মানুষ নতুন জামাকাপড় কেনে, ধর্মীয় উপকরণ কেনে। এটা আমাদের জন্য খুব ভালো সময়।”
রাজনৈতিক প্রভাব
বিগত কয়েক বছরে রামনবমীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক আলোচনা বেড়েছে। রানীগঞ্জেও এই উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের উপস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “ধর্মীয় উৎসবগুলিকে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের জন্য ব্যবহার করে। তবে, সাধারণ মানুষের কাছে এটি শুধুমাত্র এক আধ্যাত্মিক অনুভূতির বিষয়।”
সমালোচনাও রয়েছে
যদিও অধিকাংশ মানুষ এই আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছে, কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন বড় শোভাযাত্রার ফলে রাস্তায় যানজট এবং জনসাধারণের অসুবিধার বিষয়ে। কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষদের অসুবিধায় পড়তে হয়, এমন অভিযোগও উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ আনসারি বললেন, “ধর্মীয় উৎসব হওয়া উচিত, কিন্তু সবার কথা ভাবা উচিত। মাঝে মাঝে এত বড় শোভাযাত্রা হলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়।”

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জানিয়েছে, আগামী বছরে আরও বড় এবং ব্যাপক আয়োজন করা হবে। তারা আরও স্কুল, কলেজ এবং যুব সম্প্রদায়কে যুক্ত করতে চায়, যাতে নতুন প্রজন্ম রামের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য অমিতাভ শর্মা বললেন, “আমরা চাই আগামী বছর আরও ৫০টির বেশি পূজো মণ্ডপ থেকে শোভাযাত্রা বের হোক এবং শহরের আরও বেশি মানুষ এতে যোগ দিক।”
উপসংহার
রামনবমী উপলক্ষে রানীগঞ্জে এবারের আয়োজন অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ এবং উৎসবমুখর ছিল। ধর্মীয় অনুভূতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক সংহতি— সব মিলিয়ে এটি শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনা রয়েছে, তবে অধিকাংশ মানুষই এই আয়োজনে আনন্দ পেয়েছে এবং আগামী বছর আরও বড় আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে।