Snake Neul’s fierce battle!:সাপ ও নেউল—প্রকৃতির এই দুই চিরশত্রুর নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে এক রুদ্ধশ্বাস দ্বৈরথের ছবি। বাংলা প্রবাদে যাকে আমরা ‘অহি-নকুল বৈর’ বলি, সেই চিরন্তন শত্রুতার বাস্তব চিত্রই ধরা পড়ল এক ভাইরাল ভিডিওতে। ইনস্টাগ্রামের একটি বন্যপ্রাণী বিষয়ক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি পোস্ট করা এই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কীভাবে এক ফাঁকা মাঠে মুখোমুখি হয় একটি বিষধর সাপ ও এক সাহসী নেউল। ভিডিওর দৃশ্য, মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে চমক, ভয়, বিস্ময় এবং এক স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা—“কে জিতল?”ভিডিওটি দেখতে দেখতে বোঝা যায়, শুরু থেকেই নেউলটি ছিল অত্যন্ত আগ্রাসী ও কৌশলী। সাপটি মাথা তুলে ফনা তুলতেই মুহূর্তের মধ্যে হামলা করে বসে নেউলটি। এক ঝটকায় সাপের মুখে কামড় বসিয়ে দেয় সে। এরপর পা দিয়ে সাপকে মাটিতে চেপে ধরে রেখে নিজের পরাক্রমে সাপটিকে ছটফট করিয়ে দেয়। সাপটি শেষমেশ লেজ ছুঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নেউলের টানা আক্রমণে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে সাপটি। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয় নকুলের—যে প্রাণী প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে বিষধর সাপের ভয়ানক কামড়ও সহ্য করতে পারে, কারণ তার শরীরে থাকে একটি বিশেষ প্রতিরোধ ক্ষমতা।ভিডিওটির সত্যতা যদিও ‘খবর বাংলা’ যাচাই করেনি, তবুও এই ঘটনার উপর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বহু বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশপ্রেমীরা নিজেদের মত জানিয়েছেন।
বন্যপ্রাণী গবেষক ড. ঋত্বিক চক্রবর্তী বলেন, “সাপ ও নেউলের লড়াই বহু প্রাচীন। নেউল সাধারণত অত্যন্ত ক্ষিপ্র ও কৌশলী শিকারি। তার প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় বিষধর সাপের সঙ্গে লড়তেও পিছপা হয় না। সাপের চোখে চোখ রেখে নেউল যে সাহসের পরিচয় দেয়, তা প্রকৃতির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।”এই ধরনের দৃশ্য গ্রামবাংলায় বহু মানুষ নিজের চোখে দেখে থাকেন, তবে শহুরে সমাজের কাছে তা বেশ বিরল। তাই এমন একটি ভিডিও দেখে সকলের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ যেমন বলছেন, “প্রকৃতির রিয়্যাল লাইফ অ্যাকশন সিনেমা!”, কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, “ছোটো শরীর, কিন্তু সাহসে বড়—এই জন্যই নেউল অনন্য।”ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। অনেকেই বলছেন এটি দক্ষিণ ভারতের কোনও জঙ্গলাঞ্চল হতে পারে, আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন এটি ওড়িশা বা বাংলার কোনও গ্রামাঞ্চলের দৃশ্য।এই ভিডিও সামনে আসার পর অনেকে এটিকে শিক্ষণীয় হিসেবেও ব্যাখ্যা করছেন। কারণ এখানে শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়, বরং প্রকৃতির বেঁচে থাকার লড়াই, টিকে থাকার জন্য সাহস ও কৌশলের প্রয়োগ এবং শত্রুকে হারানোর জন্য জেদ ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়েছে।এক পরিবেশকর্মী লেখেন, “এটা কেবলমাত্র একটি সাপ-নেউলের লড়াই নয়, এটা প্রকৃতির শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা। যে বেশি ধূর্ত, যে বেশি প্রস্তুত, সে-ই টিকে থাকে।”তবে এই ভিডিওকে ঘিরে কিছু বিতর্কও উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এমন দৃশ্য কি নেহাতই কাকতালীয়, নাকি পরিকল্পিতভাবে তোলা হয়েছে? যদিও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মত, এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক দৃশ্য এবং সেখানে মানুষের কোনও হস্তক্ষেপ নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এই মুহূর্তে গরমকাল, এবং এমন সময় অনেক সাপই বাসা ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। নেউলও তখন এক সক্রিয় শিকারি হিসেবে তার অস্তিত্ব জানান দেয়। এমন দৃশ্য অনেক সময়ই বনাঞ্চলের আশেপাশে, এমনকি ক্ষেতখামারে বা পাড়াগাঁয়ের ঝোপঝাড়ে দেখা যায়।নিউ জলপাইগুড়ি সংলগ্ন একটি গ্রামে থাকা বনপ্রেমী শচীন চক্রবর্তী জানান, “আমি ছোটোবেলায় অন্তত তিন-চারবার এই ধরণের লড়াই দেখেছি। প্রত্যেকবারই দেখেছি, নেউল তার গতি, ধৈর্য ও আক্রমণের কৌশলে সাপকে হারিয়ে দেয়। এটা প্রকৃতির অদ্ভুত কিন্তু শক্তিশালী এক যুদ্ধ। ওদের কোনও প্রশিক্ষণ লাগে না, ওরা নিজেরাই জন্মগত যোদ্ধা।”এই ঘটনা আমাদের শেখায়, প্রকৃতির নিয়মে টিকে থাকার জন্য কেবলমাত্র শক্তিই নয়, কৌশল, ধৈর্য এবং সঠিক সময়ে আঘাত করার ক্ষমতা প্রয়োজন। আর এটাই এক জীবন্ত উদাহরণ, যা শুধু গল্পে নয়, বাস্তবেও ঘটে।তাই ‘অহি-নকুল বৈর’—এই প্রবাদ শুধু কথার কথা নয়, প্রকৃতির অমোঘ সত্য। সাপ আর নেউলের এই লড়াই যেমন রুদ্ধশ্বাস, তেমনই শিক্ষণীয়। আর এই লড়াই আবারও মনে করিয়ে দিল, সাহস আর দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে দাঁড়ালেই বড় বড় বিপদকেও হারানো যায়।