Skeleton found in Kanthi! Young man lifts it from grave and ties it to wall: কাঁথির মতো শান্ত শহরে এমন গা ছমছমে ঘটনা এর আগে কেউ দেখেনি! পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ১ নম্বর ব্লকের শ্রীরামপুর কবরস্থানে ঘটে গেল এক ভয়ানক ও অদ্ভুত কাণ্ড, যা চোখ কপালে তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক খালি হাতে কবর খুঁড়ে একটি আস্ত মানব কঙ্কাল টেনে বের করছে। তারপর সেই কঙ্কালটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে এক দেওয়ালের পাশে, আর সেই কঙ্কালের পাশেই নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই যুবকটি। মুহূর্তে এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, আর সঙ্গে সঙ্গে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে যান ঘটনাস্থলে, তাঁরা যুবকটিকে জিজ্ঞেস করলেও সে কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় উত্তেজিত জনতা তাকে মারধরও করে বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—কেন এমন কাণ্ড ঘটাল ওই যুবক? এটা কি কোনো তন্ত্রসাধনার চেষ্টার ফল, না কি ওই যুবকের মানসিক ভারসাম্য হারানোর প্রমাণ? স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, যুবকটি বেশ কিছুদিন ধরেই ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করছিল। কারও কারও দাবি, সে নাকি এলাকার কবরস্থান চুপিচুপি ঘুরে বেড়াত, এমনকি গভীর রাতে একা কবরস্থানে দেখা গিয়েছে তাকে। শ্রীরামপুর কবরস্থানের পরিচারক হাফিজুল ইসলাম জানান, “আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি কবর খোঁড়া হয়েছে। পরে ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যাই। আমি জীবনে কখনও এমন ঘটনা দেখিনি।” স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ জানা বলেন, “আমরা ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। কঙ্কাল দেখে গা শিউরে উঠছিল। ওকে জিজ্ঞেস করায় সে হেসে বলল, ‘ও আমার বন্ধু’। এরপর আর কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।”
যদিও এই ভিডিওর সত্যতা এখনো যাচাই করা হয়নি, তবে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কাঁথি থানার এক আধিকারিক বলেন, “আমরা ভিডিওটি পেয়েছি এবং তা খতিয়ে দেখছি। ওই যুবক মানসিকভাবে স্থিতিশীল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। একইসঙ্গে কবর খুঁড়ে কঙ্কাল তোলার বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখা হচ্ছে না। কঙ্কালটি কার, তা জানার জন্য ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো হবে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অনেকে রাতের দিকে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। শিশুদের একা বাইরে যেতে দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। বাড়ি বাড়ি কানাঘুষো চলছে—”কঙ্কালটা সত্যি মানুষের তো?” আবার অনেকে বলছেন, এটা কোনও অপদেবতার ডাক? এমনকি স্থানীয় পুরোহিত বা মোল্লাদের ডেকে এনে ঘটনার রহস্য বোঝার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার বলছেন, এটি কোনো হানাবাড়ির প্রভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
তবে চিকিৎসক ও মনোবিদদের মতে, এটি একটি ক্লাসিক মানসিক রোগ ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’-র লক্ষণ হতে পারে, যেখানে রোগী কল্পনার জগতে বাস করে এবং বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে। মনোবিদ ডঃ শর্মিষ্ঠা মুখার্জি বলেন, “অনেক সময় মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে না, এবং রোগী এমন সব কাজ করে বসে যা সমাজের কাছে ভয়াবহ। এই যুবকেরও হয়তো চিকিৎসা প্রয়োজন।”
পাশাপাশি কবরস্থান থেকে কঙ্কাল তুলে নেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। IPC ধারায় এই ঘটনাকে ‘Destruction of graves and remains’ ধারা অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আইনজীবী অরিন্দম ঘোষ জানালেন, “কোনও মৃতদেহ বা তার দেহাবশেষের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করলে তা Section 297 অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। পুলিশ তদন্তে যদি এটা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় একটা প্রশ্ন সবার মুখে—কঙ্কালটি কার? কোথা থেকে এল? আদৌ তা পুরোনো কারও দেহাবশেষ, নাকি সম্প্রতি কবর দেওয়া কারও? স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কবরস্থানে কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধকে সমাহিত করা হয়েছিল। সম্ভবত সেই কবর থেকেই কঙ্কালটি তুলেছে ওই যুবক। তবে এখনো পর্যন্ত যুবকের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত করেনি প্রশাসন।
ঘটনার জেরে কাঁথির শান্তিপূর্ণ জনজীবনে নেমে এসেছে ছায়া। একদিকে পুলিশের তদন্ত, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কৌতূহল আর গুজবের রমরমা—সব মিলিয়ে চূড়ান্ত গণ্ডগোল সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে কেউ গুজবে কান না দেন এবং আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকেন।
এখন সকলের নজর পুলিশের তদন্তে। যুবকের উদ্দেশ্য, মানসিক অবস্থা, কঙ্কালের উৎস—এই সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে আপাতত কাঁথির মানুষ এই ঘটনায় যেমন চমকে উঠেছেন, তেমনই সমাজে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—মৃত্যুর পরও কি শান্তি মেলে না? আর একজন জীবিত মানুষের মানসিকতা যদি এভাবে বিকৃত হয়, তাহলে সমাজের দায়িত্ব কী?