Friday, April 11, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যনিউইয়র্কের হাডসন নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত মৃত ৬

নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত মৃত ৬

helicopter crash in New York’s Hudson River :তখন নদীর আশেপাশে থাকা পর্যটকরা ভাবতেও পারেননি, এক মুহূর্তেই চারপাশের সব আনন্দ, কোলাহল স্তব্ধ হয়ে যাবে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর শুনে। হ্যাঁ, আবারও হাডসন নদীর বুকে বিধ্বস্ত হলো একটি হেলিকপ্টার, আর এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ছয়জন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন টেক জায়ান্ট সিমেন্সের স্প্যানিশ বিভাগের কর্তা অগাস্টিন এসকোবার, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন সন্তান—যাঁরা একটি আনন্দময় ছুটির দিন কাটাতে এসেছিলেন এই শহরে। এই দুর্ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিল ২০০৯ সালে ‘হাডসন মিরাকল’ নামে খ্যাত সেই ঘটনার কথা, যখন ইউএস এয়ারওয়েজের একটি বিমানের পাখিতে পাখি ধাক্কা লাগায় সেটি বাধ্য হয়েছিল হাডসন নদীতে নামতে, যদিও সে সময় সব যাত্রী অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের ঘটনা যেন সেই অলৌকিক বাঁচার ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিল—এইবার মৃত্যু করাল হাসি হাসলো এসকোবার পরিবার ও পাইলটের জীবনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটি হঠাৎই মাঝ আকাশে শব্দ করতে শুরু করে এবং প্রায় ঘুরপাক খেতে খেতে হঠাৎই জোরে হাডসন নদীতে ধাক্কা খায়। “প্রথমে মনে হয়েছিল কোনো স্টান্ট হতে পারে,” বললেন নদীর পাড়ে থাকা পর্যটক লরা স্মিথ, “কিন্তু তারপর ধোঁয়া আর চিৎকারের শব্দে বোঝা গেল, এটা কোনও দুর্ঘটনা।” সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ, দমকল এবং উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর উদ্ধার করা হয় ছয়টি মৃতদেহ। নিউ ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটি একটি প্রাইভেট চার্টার ফ্লাইট ছিল, এবং এটি ‘লিবার্টি হেলিকপ্টার ট্যুরস’ নামক সংস্থার মালিকানাধীন। এই সংস্থা ইতিপূর্বেও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এমনকি ২০১৮ সালেও এই সংস্থার একটি ট্যুর হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছিল ইস্ট রিভারে, যাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন পাঁচজন। মৃত অগাস্টিন এসকোবার সিমেন্সের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন, যিনি মূলত স্পেনের বাসিন্দা হলেও পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, “অগাস্টিন শুধু একজন দুর্দান্ত পেশাদারই ছিলেন না, একজন পরিবারপ্রেমী, সদালাপী এবং প্রগতিশীল মানুষও ছিলেন।” এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে নিউ ইয়র্কের টেক কমিউনিটি থেকে শুরু করে ইউরোপের কর্পোরেট মহলও।

CP174417240

হাডসন নদীর আশেপাশে থাকা এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং কিছুক্ষণের জন্য নদীপথে চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB)। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তবে তদন্তে অন্য কিছু উঠে এলে তা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। হেলিকপ্টার ট্যুর সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিশেষ করে যারা নিউ ইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহরে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটককে নিয়ে আকাশে ঘোরে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “এত বছর ধরে আমরা হেলিকপ্টারকে দেখতে পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, কিন্তু এই দুর্ঘটনার পর আমাদের মনে হচ্ছে এটা একটা ভয়ংকর খেলা, যেখানে কার প্রাণ কখন কেড়ে নেয়, কেউ জানে না।” এদিকে, এই দুর্ঘটনার ফলে হাডসন নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ম্যানহাটনের ওয়েস্ট সাইড হাইওয়ের গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল, কারণ উদ্ধার কাজে বাধা না পড়ে, তার জন্য সড়ক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়াও, নিউ ইয়র্কের একাধিক পর্যটন সংস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, কারণ পর্যটকদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক।

সোশ্যাল মিডিয়াতে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে দুর্ঘটনার ভিডিও ও ছবি। হাজারো মানুষ শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন—“প্রকৃতি কেমন নিষ্ঠুর, এক মুহূর্তে সব কেড়ে নিতে পারে!” কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, “এইসব বিলাসবহুল আকাশ ভ্রমণ কি আদৌ নিরাপদ? নাকি শুধুই গ্ল্যামার আর টাকার খেলা?” তবে প্রশাসন বলছে, এই ঘটনার পর সমস্ত ট্যুর হেলিকপ্টার পরিষেবার উপর আরও কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করা হবে এবং প্রতিটি যন্ত্রাংশ বারবার যাচাই করা হবে। নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, “এটা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটা আমাদের সতর্কবার্তা। নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো রকম আপস বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, “এই শহরের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পর্যটক আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা তাঁদের জীবনের জন্য দায়বদ্ধ।” সব মিলিয়ে এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, একটি মুহূর্তই বদলে দিতে পারে সবকিছু। নিউ ইয়র্ক শহর এখনও কাঁদছে এসকোবার পরিবারের জন্য, আর প্রশাসন ব্যস্ত ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নিতে। হাডসন নদীর নীল জল যেন আজও রক্তাক্ত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments