Wednesday, April 30, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসকালীঘাটের স্কাইওয়াকের নিচে ব্যবসায়ীদের নিঃশব্দ কান্না!

কালীঘাটের স্কাইওয়াকের নিচে ব্যবসায়ীদের নিঃশব্দ কান্না!

Silent cries of traders under the skywalk of Kalighat!:-কালীঘাট মন্দির, কলকাতার এক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান, যা বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই এলাকা এক বিপুল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। যানজট মুক্তির স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে, কালীঘাটের স্কাইওয়াক উদ্বোধন করা হয়। এই স্কাইওয়াকটি যেমন ভক্তদের জন্য মন্দিরে পৌঁছানোর এক সহজ পথ দেখিয়েছে, তেমনি এটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য হয়ে উঠেছে এক গভীর সংকটের জায়গা।স্কাইওয়াকের সুবিধা ভোগ করছেন মন্দির দর্শনার্থীরা। এখন তাঁরা সরাসরি মন্দিরে পৌঁছাতে পারেন, যানজট ও হট্টগোলের থেকে মুক্তি পেয়ে। কিন্তু এই আধুনিকতার ছোঁয়ার সাথে সাথে কালীঘাটের সেই ছোট্ট গলিপথে সাজানো ব্যবসাগুলি আজ নিঃশব্দ কান্নায় ভরে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যারা যুগের পর যুগ ধরে এই গলিপথে তাদের ছোট্ট দোকান চালাতেন, আজ তারা তাদের ব্যবসার ক্ষতির কারণে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন।

WhatsApp20Image202025 04 2820at209.59.3020PM scaled

এই এলাকার প্রায় প্রতিটি দোকানেই এখন সুনসান পরিবেশ। আগে যেখানে ভক্তদের ভিড়ে দোকান সামলানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে এখন সেই একই দোকানগুলোর সামনে শূন্যতা, ক্রেতার অভাব। একসময় কালীঘাটের গলিপথ ছিল ব্যবসায়ীদের জন্য এক লাভজনক এলাকা, যেখানে বেচাকেনা রোজকার ছিল। কিন্তু আজ, স্কাইওয়াকের কারণে এই এলাকার ব্যবসা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভক্তরা এখন দ্রুত মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য স্কাইওয়াক ব্যবহার করেন, ফলে নিচের দোকানগুলির দিকে তেমন কেউ মনোযোগ দেন না।কালীঘাটের দোকানিদের মতে, এই পরিবর্তন তাদের জীবনের জন্য এক বড় ধাক্কা। এক ব্যবসায়ী, যিনি ৩০ বছর ধরে তার দোকান চালাচ্ছেন, বলেন, “আগে মন্দিরের দর্শনার্থীদের ভিড়ে আমার দোকানে ক্রেতা আসত, কিন্তু এখন ভিড় কমে গেছে। একসময় দিনে শতাধিক লোক আমার দোকানে আসতেন, কিন্তু এখন এমনকি দু’চারজনও আসে না। আমার পরিবারের জীবন তো এই দোকানের উপরই নির্ভর করত। আজ আমি কী করব, জানি না।”

এমন আরও অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা একই সমস্যার সম্মুখীন। তারা জানান, স্কাইওয়াক তাদের জন্য যেমন মন্দিরের কাছে পৌঁছানোর সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি তাদের ব্যবসার উপরে চাপ ফেলেছে। তাদের মতে, স্কাইওয়াকের কারণে দর্শনার্থীরা সহজেই উপরের অংশে পৌঁছে যাচ্ছেন এবং দোকানগুলির দিকে আর মনোযোগ দিচ্ছেন না।এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হতাশা নিয়ে কথা বলেছেন কালীঘাটের এক জনপ্রতিনিধি। তিনি বলেন, “এই স্কাইওয়াক প্রকল্পটি যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে, তেমনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। আমরা যথাসম্ভব তাদের সহায়তার চেষ্টা করবো, তবে প্রশাসনের উচিত তাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।”কালীঘাটের স্কাইওয়াকের উদ্বোধন যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, তা অবশ্যই সবার কাছে প্রশংসিত। এটি মন্দিরে দর্শনার্থীদের জন্য একটি সুগম পথ তৈরি করেছে এবং যানজটের সমস্যাও অনেকটাই কমিয়েছে। তবে একদিকে যেখানে আধুনিকতা ও সুবিধা এসেছে, সেখানে আরেকদিকে বহু মানুষ তাদের জীবিকা হারাচ্ছেন, তাদের ছোট ব্যবসাগুলি আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

Screenshot202025 04 3020211025

এই সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে আসে, কিভাবে এই পরিবর্তনগুলি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রভাবিত করবে। যারা বছরের পর বছর ধরে ছোট ব্যবসা করে পরিবার চালাতেন, তাদের জন্য এখন কি অপেক্ষা করছে? স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, যদি প্রশাসন তাদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে তারা তাদের জীবিকা হারাতে পারেন। স্কাইওয়াক তাদের জন্য শুধু এক নতুন রাস্তা নয়, বরং এক নতুন সংকটের মুখোমুখি হওয়া।এরই মধ্যে, কলকাতা শহরের বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবি উঠছে যে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক। এছাড়া, ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে বিকল্প উপায় ও সরকারি সাহায্য দেয়া হলে তাদের জন্য কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা যেতে পারে।এখন দেখা যাবে, এই সংকটের পর কালীঘাট এলাকার ছোট ব্যবসায়ীরা কিভাবে নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। যদিও স্কাইওয়াক আধুনিকতা এনে দিয়েছে, তবুও একটি প্রশ্ন রয়ে গেছে—কালীঘাটের এই ছোট ছোট ব্যবসাগুলি কি আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে পারবে?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments