Shah Rukh Khan put nail polish on his feet : কলকাতার আরজি কর হাসপাতাল সংলগ্ন নির্মম ঘটনা যেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের পটচিত্র শিল্পীদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে। দুর্গাপূজা মানেই বাঙালির জন্য চরম ব্যস্ততা, আবেগ, আর চিরায়ত সংস্কৃতির রঙের উত্সব। বছরের এই সময়েই কৃষ্ণনগর ঘূর্ণী তরুণ সংঘ সংলগ্ন বক্সীপাড়ার পটচিত্র শিল্পী রেবা পালসহ অনেকেই তাদের শিল্পের উপর নির্ভর করেন। বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময়েই তাদের কাজের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি বিপরীত। দুর্গাপূজার বড় অর্ডারগুলি কমে গেছে, আর অনেকেই হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রেবা পাল বলেন, “প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় আমরা খুবই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরজি করের ঘটনার পর মানুষ যেন এই ধরনের শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। প্রতিমা তৈরির মতোই পটচিত্র তৈরির অর্ডারও অনেক কমে গেছে। এবছর দুর্গাপূজার জন্য মাত্র দুটি অর্ডার পেয়েছি, যেখানে অন্যান্য বছর এই সময়টাতে অনেক বেশি কাজ থাকত।”
এই অর্ডার কমে যাওয়ায় পটচিত্র শিল্পীদের আয় কমে গেছে। তারা পরিবার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। রেবা পাল তার চিলেকোঠার ঘরে বসে যখন রং ও তুলির সাহায্যে এই চিত্রশিল্প করেন, তখন মনে করেন তার স্বামীকে, যিনি তাকে এই শিল্পের পাঠ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী যখন জীবিত ছিলেন, তখন আমার কাছে এই কাজ ছিল একটা ভালোবাসার জায়গা। এখন সেটা দায়িত্বের পাশাপাশি আমার জীবিকার উপায়। কিন্তু এবার যেন সেই উপায়টাই সংকুচিত হয়ে আসছে।”
আরজি করের ঘটনার ফলে শহরজুড়ে এক প্রকার আশঙ্কা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠে এসেছে। দুর্গাপূজার মতো বড় উত্সবের জন্য কমিটি ও ব্যক্তিগত স্তরে মানুষজন বেশি সচেতন হয়ে পড়েছেন। তার ফলে শিল্পী ও মৃৎশিল্পীরা যে কাজের উৎসব মেলে, সেটি আর আগের মতো নেই। কলকাতার জনপ্রিয় পটচিত্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য শ্যামল বিশ্বাস জানান, “বছর বছর আমাদের শিল্পীদের কাজে ঝুঁকি বাড়ছে। দুর্গাপূজা যেমন তাঁদের জন্য ব্যস্ততা নিয়ে আসে, ঠিক তেমনই এই বছরের মতো ঘটনাগুলি তাঁদের জীবিকায় বড় ধাক্কা দেয়। এই শিল্পের চাহিদা কমলে আমরা সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবো।”
পটচিত্র এমন এক শিল্প যার প্রতি লোকাল জনগণের চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পটচিত্রের মাধ্যমে অনেকেই ঐতিহ্যের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পছন্দ করেন। রেবা পালও বলেন, “আমাদের এই ছোট পাড়ায় সবসময়ই উৎসবের সময় মানুষ আসেন। কিন্তু এবার সেই ভিড়টা আর নেই। দূর থেকে মানুষ আর আসছেন না। আমাদের শিল্পের প্রতি মনোযোগটা যেন ক্রমেই কমে যাচ্ছে।”
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রস্তাব করছেন, দুর্গাপূজার শিল্পীদের জন্য সরকারের তরফে আর্থিক সহযোগিতা বা ব্যবসায়িক নীতিমালা প্রয়োজন। কৃষ্ণনগর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সোমনাথ বসু জানান, “এই অঞ্চলের শিল্পী ও মৃৎশিল্পীদের সাহায্য করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছি। তারা যেন তাদের কাজ নিয়ে উৎসাহিত থাকতে পারেন এবং জীবনযাপন বজায় রাখতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা দরকার। আমরা চাই, এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি যেন আরো প্রসারিত হয়।”
বর্তমান পরিস্থিতি শিল্পীদের জন্য যেমন হতাশাজনক, তেমনি ভবিষ্যতে এই শিল্পের টিকে থাকার ওপরও চাপ বাড়াচ্ছে। এবারের দুর্গাপূজার পর যদি মানুষের মনোযোগ আর শিল্পীদের কাজে আগ্রহ না বাড়ে, তাহলে হয়তো অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবেন। এই মন্দা পরিস্থিতি পটচিত্রের মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পের টিকে থাকার ক্ষেত্রে গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেলে হয়তো এই শিল্পের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হতে পারে এবং পটচিত্র শিল্পীরা নতুন করে জীবন ফিরে পেতে পারেন।