Thursday, May 29, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যরাজ্য জুড়ে প্রবল দুর্যোগের সর্তকতা

রাজ্য জুড়ে প্রবল দুর্যোগের সর্তকতা

Severe disaster alert across the state:সকালে ঘুম ভেঙে জানালা খুলতেই কেমন একটা ভারী হাওয়ার ঝাপটা লাগে মুখে, আকাশ ঢেকে আছে গা-ছমছমে মেঘে—আর তারই মধ্যে হাওয়া অফিস থেকে এল নতুন সতর্কবার্তা, রাজ্য জুড়ে প্রবল দুর্যোগের সম্ভাবনা। বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী কয়েকদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই নিম্নচাপটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে রূপান্তরিত হবে এবং ধীরে ধীরে উত্তর দিকে এগোলেও সিস্টেমটি দক্ষিণ দিকে কিছুটা ঝুঁকে রয়েছে। ফলে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতেই প্রথমে প্রভাব পড়বে বেশি। মৎস্যজীবীদের জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে—৩১ মে পর্যন্ত কেউ যেন গভীর সমুদ্রে না যান, সমুদ্র থাকবে অতি বিপজ্জনক অবস্থায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাওয়া অফিস স্পষ্ট জানিয়েছে, কোথাও কোথাও ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে, আবার সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা।

ফলে একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগের বাতাবরণ। কলকাতায় বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৪ থেকে ৯৫ শতাংশ, ফলে বৃষ্টি হলেও গরম-আর্দ্রতা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতার তাপমাত্রা থাকবে ২৬ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে। বৃহস্পতিবার সকালে হাওয়া অফিসের প্রধান বিজ্ঞানী সোমনাথ মন্ডল বললেন, “এই নিম্নচাপের ফলে রাজ্যের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা মানুষকে অনুরোধ করছি, এই সময় বিশেষভাবে সাবধান হতে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে, কারণ সমুদ্রের অবস্থাও অশান্ত থাকবে।” তার কথার প্রতিফলন মিলছে উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীদের মধ্যে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জের মৎস্যজীবী রমেশ মন্ডল বলছেন, “আমরা গতকাল রাতেই খবর পেয়েছি, তাই নৌকা নামাইনি। তবে এতদিন মাছ না ধরলে সংসার চলবে কী করে?” একই উদ্বেগ নদীয়ার কৃষক বিশ্বজিৎ মন্ডলের গলায়, “বৃষ্টি হলে আমাদের খেত ভিজে যাবে, ফসলের ক্ষতি হবে। আবার না হলে জমি শুকিয়ে যাবে।

Screenshot 2025 05 29 171708

কবে যে স্বস্তি পাব!” হাওয়া অফিসের এই সতর্কবার্তায় সাধারণ মানুষও ভীত-সন্ত্রস্ত। শহর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় দোকানদাররা দোকানের শাটার একটু নামিয়ে রাখছেন, যাতে হঠাৎ বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়ায় কোনও ক্ষতি না হয়। কলেজ পড়ুয়া রিমা দাস বলছে, “গতকাল থেকে আকাশ দেখে মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবে। আজ সকালে যখন শুনলাম, চারদিকে সতর্কতা, তখন একটু আতঙ্কই লাগছে।” পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতি বছর জুনের প্রথম সপ্তাহের আগে এমন নিম্নচাপ সাধারণত তৈরি হয় না, কিন্তু বঙ্গোপসাগরের জলতলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এমন আবহাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ দীপ্তাংশু সেন জানাচ্ছেন, “গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বাড়ছে। তাই আমাদের এ ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ইতিমধ্যেই মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments