Seven rings have disappeared from the earth!:-কখনও রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে শনির আশ্চর্য বলয়গুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন? মহাকাশপ্রেমীদের কাছে শনি গ্রহ মানেই এর চারপাশে ঘিরে থাকা সাতটি বলয়ের জাদুকরী দৃশ্য। কিন্তু গত সোমবার থেকে এই বলয়গুলো হঠাৎ করেই যেন আকাশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে! টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেও শনির সেই বিখ্যাত বলয়গুলোর আর দেখা মিলছে না। এই ঘটনা অবাক করা হলেও মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে অস্বাভাবিক নয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই বলয়গুলি সাময়িকভাবে পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়েছে এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যা প্রতি ২৯ বছর ৪ মাস অন্তর ঘটে।এই অদ্ভুত মহাজাগতিক ঘটনার কারণ শনির অবস্থান এবং ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। শনি গ্রহ নিজের অক্ষের উপর ২৬.৭ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে, যা এর বলয়গুলোর অবস্থানকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে, শনির সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ২৯ বছর ৪ মাস সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ে শনি এমন এক অবস্থানে চলে আসে, যেখানে এর বলয়গুলি পৃথিবীর সমান্তরালে থাকে। বলয়গুলি অত্যন্ত পাতলা, প্রায় ১০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার পুরু, কিন্তু চওড়ায় ৭৩,০০০ কিলোমিটারের মতো বিশাল। তাই এমন সমান্তরাল অবস্থায় থাকলে এগুলোকে পৃথিবী থেকে আর দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এই বলয়গুলোর অবস্থান এমনভাবে হয়েছে যে, তা পৃথিবী থেকে দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হবে। অর্থাৎ ২০২৫ সালের শেষের দিকে পুনরায় টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয় দেখা যাবে। এখন যে বলয়গুলো চোখের আড়াল হয়েছে, সেগুলো বরফের কণা, পাথরের টুকরো এবং মহাজাগতিক ধুলো দিয়ে তৈরি। এটি শুধু একটি ভৌগোলিক এবং মহাকাশীয় কৌতূহলপূর্ণ ঘটনা, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।এই ধরনের ঘটনা মহাকাশে আগেও বহুবার ঘটেছে। প্রতি ২৯ বছর পর শনির বলয় পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়, ঠিক যেমনটা ১৯৯৫-৯৬ সালে হয়েছিল এবং তারও আগে ১৯৬৬ সালে। এমনকি আরও আগে, যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না, তখন এই ঘটনাকে রহস্যময় বলে মনে করা হতো। তবে বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার উন্নতির কারণে এই ঘটনাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।অবশ্যই! এটি একটি সাময়িক মহাজাগতিক ঘটনা। যখন শনি পৃথিবীর সঙ্গে এমন একটি অবস্থানে আসবে যেখানে তার বলয়গুলো আর সমান্তরাল থাকবে না, তখন আবার এই বলয়গুলো চাক্ষুষ করা যাবে। তাই মহাকাশপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষার প্রহর শুরু হলো। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার টেলিস্কোপে শনির এই বিস্ময়কর বলয় দেখা যাবে।
শনির বলয়গুলো নিয়ে মানুষের কৌতূহল বহুদিনের। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম তার টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয় আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস ১৬৫৫ সালে আরও স্পষ্টভাবে শনির বলয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন। এই বলয়গুলো মূলত বরফের কণা, ছোট পাথরের টুকরো এবং মহাজাগতিক ধুলো দিয়ে তৈরি। এগুলো শনির চারপাশে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘুরছে এবং এগুলোর ঘূর্ণন শনির অভিকর্ষ বলের কারণে বজায় থাকে।এই ঘটনার পর মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে কৌতূহলের ঝড় উঠেছে। অনেক শিক্ষার্থী এবং মহাকাশপ্রেমী এই ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। কলকাতার এক মহাকাশ গবেষক জানালেন, ‘‘শনির বলয় পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা মহাকাশের এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। এটি বিরল নয়, তবে যাঁরা এই বলয় প্রথমবার দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’’এক কলেজ পড়ুয়া মহাকাশ উৎসাহী শুভ্রা দাস বললেন, ‘‘আমি অনেকদিন ধরেই টেলিস্কোপ দিয়ে শনি গ্রহকে দেখি। বলয়গুলো হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ায় আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। পরে খবর পড়ে বুঝলাম, এটা একটা প্রাকৃতিক ঘটনা।’’

এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের বিজ্ঞান এবং মহাকাশ সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ বাড়ায়। মহাশূন্যের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝে আমরা মানুষ কতটা ক্ষুদ্র, সেটাও বুঝতে পারি। বিজ্ঞান এবং গবেষণার মাধ্যমে আরও অজানা সত্যের খোঁজ পাওয়ার জন্য আমাদের এই কৌতূহল ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পৃথিবী থেকে শনির সাতটি বলয় সাময়িকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেলেও মহাকাশপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় ঘটনা। মহাকাশের এই রহস্যময় ঘটনাগুলি আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও জানতে এবং বুঝতে উৎসাহিত করে। আগামী ছয় মাস অপেক্ষা করার পর আবার যখন শনির বলয় দৃশ্যমান হবে, তখন তা আরও বৃহৎ উৎসাহ এবং আগ্রহের বিষয় হবে।