Senior doctors protest in Raniganj seeking justice: রানীগঞ্জের চিকিৎসা মহল আবারো উত্তাল। এবার সিনিয়র ডাক্তাররা সরাসরি পথে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, আরজি কর কাণ্ডের সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার রানীগঞ্জের রাম মন্দিরে পুজো প্রার্থনার পর থেকে একটি স্ট্রিট কর্নার মিছিলের আয়োজন করে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সমস্ত সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তাররা। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হন শহরের প্রায় সব চিকিৎসক।
গত দু’মাস ধরে চিকিৎসক মহল ক্ষোভে ফুঁসছে, কারণ এখনো আরজি কর হাসপাতালের অভয়া কাণ্ডের সঠিক বিচার হয়নি। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়ার কারণে সমগ্র চিকিৎসা সমাজ ক্ষুব্ধ। রানীগঞ্জের আইএমএ-র সভাপতি ডাক্তার চৈতালি বসু জানিয়েছেন, “প্রায় দু’মাস হতে চললো, কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না অভয়ার সুবিচার হয়। আমরা প্রত্যেক বৃহস্পতিবার রানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব।”
ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিলে বোঝা যায়, কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসক অভয়া নার্সিংহোমে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার বিচার নিয়ে সারা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সমাজে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভয়া নামক একজন জুনিয়র চিকিৎসকের ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদে দফায় দফায় আন্দোলন চলছে। ঘটনার পর থেকেই সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তাররা একজোট হয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।

রানীগঞ্জের সিনিয়র ডাক্তাররা এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন। তারা দাবি করেন, “আমরা চাই এই ঘটনা যত দ্রুত সম্ভব সঠিকভাবে তদন্ত করা হোক এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। চিকিৎসক সমাজের নিরাপত্তা এবং সম্মান রক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নই।” তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা বন্ধ করা, চিকিৎসকদের উপর হওয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং রোগী ও তাঁদের পরিবারদের দ্বারা চিকিৎসকদের সঙ্গে অসহযোগিতা বন্ধ করা।
রানীগঞ্জের এই আন্দোলন শুধু স্থানীয় নয়, এটি সমগ্র চিকিৎসক সমাজে একটি বড়ো উদাহরণ তৈরি করেছে। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রতিদিন নতুন রূপ নিচ্ছে এবং চিকিৎসকরা একের পর এক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। ডাক্তারদের মতে, অভয়া কাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনিয়মের একটি অংশ। চিকিৎসকদের সম্মান ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো প্রকার আপস না করার অঙ্গীকার নিয়ে তাঁরা এই আন্দোলনে নামছেন।
রানীগঞ্জের চিকিৎসক সমাজের অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের আন্দোলন প্রয়োজন ছিল, কারণ চিকিৎসা পেশায় থাকা ব্যক্তিরা দিনের পর দিন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন এবং প্রশাসন থেকে সঠিক সুরক্ষা পাচ্ছেন না। সিনিয়র ডাক্তার ডাক্তার শুভেন্দু ঘোষ বলেন, “চিকিৎসকদের উপর হেনস্থা এবং মানসিক চাপ দিনে দিনে বাড়ছে। আমরা যারা চিকিৎসা পেশায় আছি, তাঁরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না, কারণ আমাদের মাথায় সবসময় একটি নিরাপত্তার অভাব কাজ করছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এদিকে, স্থানীয় মানুষদের প্রতিক্রিয়া এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মিশ্র। অনেকে মনে করছেন, ডাক্তারদের দাবিগুলো ন্যায্য এবং তাঁদের কাজের জন্য যথাযথ সুরক্ষা এবং সম্মান পাওয়া উচিত। অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করছেন যে, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে একটু ধৈর্য দেখানো উচিত, কারণ এই ধরনের আন্দোলন কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ রোগীদের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ডাক্তারদের ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত, তবে এই আন্দোলনের কারণে যদি আমাদের চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বে।”
এমন অবস্থায়, রানীগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং চিকিৎসকরা তাঁদের প্রতিবাদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষেরও যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”
এই আন্দোলনের ভবিষ্যত প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত। তারা মনে করছেন, যদি এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকে এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে পুরো চিকিৎসা ক্ষেত্র একটি সংকটে পড়তে পারে। অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যেই তাঁদের কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন, কারণ তাঁদের কাজের পরিবেশ দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে।
আইএমএ-র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, তাঁরা তাঁদের দাবিগুলিকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু যদি তাঁদের দাবিগুলো মানা না হয়, তাহলে আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে। “আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা চিকিৎসা পরিষেবাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমরা আমাদের সম্মান এবং সুরক্ষার জন্য লড়াই করে যাবো,” বললেন ডাঃ চৈতালি বসু।
এই আন্দোলন আগামী দিনে কেমন রূপ নেয়, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, চিকিৎসক সমাজ তাঁদের অধিকার এবং সুরক্ষার প্রশ্নে আপোষ করবে না। এই আন্দোলন শুধু রানীগঞ্জ নয়, সমগ্র রাজ্যের চিকিৎসকদের মনোভাব এবং ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।