Saturn’s rings will disappear : মহাকাশের রহস্যময়তা চিরকালই আমাদের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে। আর যদি সেই রহস্যের সঙ্গে শনিগ্রহের মতো মহাজাগতিক এক বিস্ময়ের কথা উঠে আসে, তাহলে আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই সপ্তাহের শেষে আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনি তার বিখ্যাত বলয় নিয়ে অদ্ভুত এক ঘটনার মুখোমুখি হবে। পৃথিবী থেকে সাময়িকভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে শনির বলয়! তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বলয়টি সত্যিই হারিয়ে যাবে না, বরং পৃথিবী এবং শনির মধ্যবর্তী কৌণিক অবস্থানের কারণে আমরা এই মহাজাগতিক বিভ্রম প্রত্যক্ষ করব।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এই অদৃশ্য হওয়ার পেছনে রয়েছে শনিগ্রহের বিশেষ কৌণিক অবস্থান। শনি গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় এমনভাবে তার অক্ষের ওপর হেলে থাকে যে মাঝে মাঝে তার বলয় পৃথিবীর চোখের আড়ালে চলে যায়। শনির অক্ষ উল্লম্ব থেকে ২৬.৭৩ ডিগ্রি হেলানো। এই অবস্থানই বলয় অদৃশ্য হওয়ার মূল কারণ। পৃথিবীও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকা অবস্থায়। শনির এই বলয় অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা প্রতি ১৩ থেকে ১৫ বছরে একবার ঘটে। এটি হলো মহাজাগতিক কৌণিক মেলবন্ধনের ফল, যার কারণে আমরা দেখতে পাই এই অসাধারণ দৃশ্য।

শনির এই বলয় পৃথিবীর বিভিন্ন মহাকাশ গবেষক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। শনির বলয় মূলত অসংখ্য বরফের কণা, ধূলিকণা এবং ক্ষুদ্র পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি। এই বলয়গুলি শনি গ্রহের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ায় পৃথিবী থেকে অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখা যায়। ধারণা করা হয়, শনির বলয়গুলি প্রাচীন কালের কোনো উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ বা সৌরজগতের সৃষ্টি পরবর্তী ধূলিকণার অবশিষ্টাংশ হতে পারে।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যখন পৃথিবী ও শনি গ্রহ একই সরল রেখায় অবস্থান করবে এবং শনির বলয় পৃথিবী থেকে খুব সরু কোণে ঘুরে যাবে, তখন বলয়টি একদম পাতলা একটি রেখার মতো দেখাবে। এরপর ধীরে ধীরে সেটি অদৃশ্য হয়ে যাবে। এই ঘটনা খুব কম সময়ের জন্য ঘটে, কিন্তু তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এক মহা গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের সুযোগ এনে দেয়।
এমন বলয় অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শনির বলয় এবং তার আংশিক কাঠামো সম্পর্কে আরও পরিষ্কার তথ্য সংগ্রহ করা যায়। শনির বলয় যখন সরু হয়ে যায়, তখন বিজ্ঞানীরা গ্রহের বলয়ের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং বলয়ের সঙ্গে শনিগ্রহের আকর্ষণ শক্তির সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারেন। নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই ঘটনা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ চালাবে বলে জানিয়েছে।এই ঘটনা নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়েছে মহাকাশপ্রেমী এবং জ্যোতির্বিদ্যার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। কলকাতার বিখ্যাত খগোল বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, “এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করব। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বিরল অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।”
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির বলয় সম্পর্কিত আরও গবেষণা ভবিষ্যতে মহাকাশে নতুন আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। শনির বলয়ের গঠন, তার কণার আকার এবং ঘূর্ণনের বিশ্লেষণ মহাকাশ বিজ্ঞানের জগতে নতুন পথ খুলে দিতে পারে।এদিকে, সাধারণ মানুষও এই ঘটনাকে নিয়ে বেশ উৎসাহিত। অনেকেই তাদের টেলিস্কোপ দিয়ে এই বিরল দৃশ্য দেখতে চান। মধুসূদন পাল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা আগে শুনতাম গ্রহ-তারা নিয়ে অনেক গল্প। কিন্তু এখন বিজ্ঞান আমাদের এমন সব ঘটনা দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে, যা সত্যিই অসাধারণ।”