‘Sampriti’ Sagar Ali on behalf of Sampriti Oikya: ২৭ বছর বয়সী মেমারীর কাশিয়াড়া গ্রামের ছেলে সাগর আলী এখন বাংলার গর্ব। কয়েকদিন আগেই মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্রিট প্রিমিয়ার লিগ (ISPL)-এ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ‘সেরার সেরা’ খেলোয়াড় হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করেছেন। তাঁর অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে খোদ কিংবদন্তি ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর এবং বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন তাঁর হাতে বিজয়ীর পুরস্কার তুলে দেন। শুধু তাই নয়, আইএসপিএল-এর মঞ্চে সাগরের পারফরম্যান্স দেখার পর অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। মুম্বাইয়ের আলো ঝলমলে পরিবেশের পর এবার নিজের শহর মেমারীতে ফিরে পেলেন আরও বড় ভালোবাসা ও সমর্থন।
সাগর আলীর এই সাফল্যে গোটা মেমারী শহর এবং কাশিয়াড়া গ্রাম গর্বিত। তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিন থেকেই তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে হাজির হয়েছিলেন অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ। এই পর্ব আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল মেমারীর সম্প্রীতি ঐক্য, যারা ১৮ ফেব্রুয়ারি সাগর আলীকে বিশেষভাবে সংবর্ধিত করল। এদিন সম্প্রীতি ঐক্যের পক্ষ থেকে তাঁকে উত্তরীয় ও ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।
সম্মাননা গ্রহণ করে সাগর আলী বলেন, “এটা আমার কাছে শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং মেমারীর, পূর্ব বর্ধমানের এবং বাংলার মানুষের ভালোবাসা। আমি ছোটবেলা থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি, কিন্তু স্বপ্ন কখনো থামাইনি। আজ যখন দেখি আমার খেলার জন্য আমার নিজের শহরের মানুষ গর্বিত, তখন মনে হয় সত্যিই পরিশ্রমের ফল মেলে। আমি চাই আরও তরুণ ক্রিকেটাররা উঠে আসুক, যাদের জন্য আমি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারি।”
সাগর আলীর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। গ্রামের মাঠ থেকে খেলা শুরু, তারপর স্থানীয় টুর্নামেন্ট, এরপর রাজ্য স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নজর কেড়েছেন তিনি। তবে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে ইন্ডিয়ান স্ট্রিট প্রিমিয়ার লিগে, যেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। তাঁর ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং দক্ষতা দেখে কোচরাও তাঁকে ভবিষ্যতের একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে দেখছেন।
মেমারী সম্প্রীতি ঐক্য দীর্ঘদিন ধরে সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। সাগর আলীর সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে তারা যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, তা নিঃসন্দেহে অনন্য। সম্প্রীতি ঐক্যের অন্যতম সদস্য অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, “সাগর আমাদের গর্ব। শুধু আমাদের মেমারী নয়, গোটা বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছে। আমরা চাই, সে আরও এগিয়ে যাক। বাংলার আরও অনেক তরুণ এইভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা দেখাক।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাগর আলী জানান, তিনি এবার আরও বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চান। আইএসপিএলে তাঁর পারফরম্যান্সের পর অনেক বড় ক্লাব এবং ক্রিকেট সংগঠন তাঁকে নজরে রেখেছে। ভবিষ্যতে আইপিএল বা ভারতীয় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন তাঁর চোখে।
তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন শুধু এখানেই শেষ নয়। আমি চাই ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলে দেশকে গর্বিত করতে। আমি চাই আরও ছেলেরা এই স্ট্রিট ক্রিকেট থেকে উঠে এসে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা দেখাক।”
সাগরের এই সাফল্যে মেমারীর কাশিয়াড়া গ্রামেও উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মিষ্টি বিতরণ করেছেন, আনন্দ উল্লাস করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, সাগর আলী গ্রামের বাচ্চাদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠবেন। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল বলেন, “আমাদের গ্রামের ছেলে আজ সারা বাংলার গর্ব। ছোটবেলা থেকে ওর ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখেছি। আজ ওর এই সাফল্য আমাদের সবার জন্য আনন্দের।”
সাগর আলীর আইএসপিএলে সেরা হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন অনেকে। এমনকি বিভিন্ন স্পনসর কোম্পানিও তাঁর খেলার উন্নতির জন্য এগিয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
সাগর আলীর এই সাফল্য শুধু তাঁর নিজের নয়, বরং গোটা মেমারী, পূর্ব বর্ধমান এবং বাংলার তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর যাত্রা দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিভা থাকলে এবং কঠোর পরিশ্রম করলে কিছুই অসম্ভব নয়। সম্প্রীতি ঐক্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সেই বার্তাকেই আরও শক্তিশালী করেছে।
এই সংবর্ধনা শুধুমাত্র সাগর আলীর জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতিটি প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের জন্য একটি বার্তা—“কঠোর পরিশ্রম করো, স্বপ্ন দেখো, এবং একদিন তোমরাও সাফল্যের মঞ্চে দাঁড়াবে।”