Roses are not sold even on Valentine’s Day : আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের ভালোবাসার মানুষকে উপহার দিচ্ছেন নানা উপহারের সঙ্গে লাল গোলাপ, যা যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। কিন্তু বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ছবিটা একেবারেই আলাদা। গোলাপের দোকানে দোকানে রঙিন ফুলের বাহার থাকলেও, সেই ফুল হাতে নিয়ে ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। বিক্রেতাদের চোখে-মুখে শুধুই হতাশার ছাপ। অন্যান্য বছর যেখানে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সকাল থেকেই গোলাপ বিক্রির ধুম পড়ে যেত, সেখানে এবার সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও বিক্রি একেবারেই তলানিতে।
বাঁকুড়ার বাজারে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গোলাপের সমাহার থাকলেও, ক্রেতার দেখা নেই। ফুল বিক্রেতা রমেশ মাহাতো দীর্ঘদিন ধরে বাঁকুড়ার কোতুলপুর বাজারে ফুলের দোকান চালান। তার কথায়, “বছর বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে গোলাপ বিক্রি আমাদের ব্যবসার সেরা দিনগুলোর মধ্যে পড়ত। কিন্তু এবার সেই ছবি পাল্টে গেছে। সকাল থেকে বসে আছি, হাতে গোনা কয়েকটা গোলাপ বিক্রি হয়েছে মাত্র। সাধারণত এই দিনে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে গোলাপ বিক্রি হত, কিন্তু এবার দাম কমিয়েও লাভ নেই।”
একই অভিযোগ আরেক ফুল বিক্রেতা বিজয় রজকের। তিনি বলেন, “গোলাপ আনতে গিয়ে দাম গুনতে হয়েছে অনেক, কিন্তু বিক্রি নেই। লাভ তো দূরের কথা, এবার ফুলের দামই তুলতে পারব কি না, সেটা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।”
ফুলের বাজারে এমন মন্দা কেন? তার পেছনে একাধিক কারণ উঠে আসছে। এখন প্রেমিক-প্রেমিকারা গোলাপের বদলে অনলাইন শপিং সাইট থেকে নানা ধরনের উপহার কিনে পাঠাচ্ছেন। গোলাপের জায়গায় চকোলেট, সফট টয়, পারফিউম কিংবা ডিজিটাল গিফটের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। ফলে গোলাপের চাহিদা কমেছে। এবছর আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে গোলাপ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলস্বরূপ, ফুলের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই গোলাপ না কিনে অন্য উপহার বেছে নিচ্ছেন। কিছু প্রেমিক-প্রেমিকারা মনে করেন গোলাপের চেয়ে স্মার্টফোনের একটি মেসেজ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টই যথেষ্ট। ফলে গোলাপ কেনার তাগিদ আগের মতো নেই। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে আর্থিক সঙ্কটও একটা বড় কারণ। দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, ফলে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টেনেছেন।শুধু ফুল বিক্রেতারা নন, গোলাপ চাষিরাও বড় সমস্যার মুখে পড়েছেন। বাঁকুড়া, হুগলি, নদীয়া, মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে গোলাপ চাষ হয়। চাষিরা এক বছরের অপেক্ষায় থাকেন এই সময়টায় বেশি দামে ফুল বিক্রি করার জন্য। কিন্তু বিক্রি কম থাকায় অনেক ফুল চাষির লোকসান হচ্ছে।
একজন ফুল চাষি দীনেশ পাল বলেন, “এই বছরের আবহাওয়া গোলাপ চাষের জন্য খুব খারাপ ছিল। অনেক ফুল নষ্ট হয়েছে। বাজারে যে গোলাপ বিক্রি করতে পেরেছি, সেটার দামও পাইনি ঠিক মতো। আমাদের লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠছে না।”
ভবিষ্যতে গোলাপের বাজার আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তরুণ প্রজন্ম যদি ফুলের চেয়ে অন্য উপহারে বেশি আকৃষ্ট হয়, তাহলে ফুলের চাহিদা কমতেই থাকবে। ফুল ব্যবসায়ীদের তাই বিকল্প পথ খুঁজতে হতে পারে।কিছু বিক্রেতা ইতিমধ্যেই অন্য ফুলের ব্যবসায় নজর দিচ্ছেন। বিশেষ করে জারবেরা, গাঁদা বা ক্যাকটাসের মতো দীর্ঘস্থায়ী গাছের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন তারা। কারণ গোলাপ খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, আর মানুষ এখন এমন কিছু চায় যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।চাষিরা চাইছেন, সরকার তাদের জন্য কিছু বিশেষ পরিকল্পনা নিক। যেহেতু আবহাওয়ার কারণে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং গোলাপের দাম উঠছে না, তাই সরকার যদি কিছু ভর্তুকি দেয় কিংবা ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমঘর বানানোর ব্যবস্থা করে, তাহলে তারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।