Roof collapses during school in Rajasthan, several dead: দেশজুড়ে বর্ষার মরসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক পরিকাঠামোগত দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসছে। কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রদেশের ভোপালে চলছিল ক্লাস, সেই সময়ে হঠাৎই ছাদের চাঙর ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রাজস্থানে পুনরাবৃত্তি ঘটল আরও মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনার। যেখানে শুধুমাত্র স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করাই ছিল শিশুদের উদ্দেশ্য, সেখানেই তাদের জীবনের ইতি ঘটল এক ভয়ঙ্কর অবহেলার ফলে। স্কুল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের চূড়ান্ত অভাব এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার জেরে এবার প্রাণ হারাতে হল রাজস্থানের ঝালাওয়ারের একাধিক পড়ুয়াকে।রাজস্থানের ঝালাওয়ারের পিপলোদি গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন চলছে পঠনপাঠন। বাইরে ছিল টানা বৃষ্টি। শিশুরা ক্লাসে মন দিয়ে পড়ছিল ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ছাদের একটা বড় অংশ। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিৎকারে ভরে যায় গোটা স্কুল। আচমকা ভেঙে পড়া ছাদের নিচে চাপা পড়ে যায় বেশ কয়েকজন শিশু। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, একসঙ্গে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে স্কুল চত্বর। শুরু হয় তীব্র আতঙ্ক, হুড়োহুড়ি করে শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে যাঁরা চাপা পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্ধারে তৎক্ষণাৎ নেমে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক ও কর্মীরা। দ্রুত খবর দেওয়া হয় প্রশাসনকে। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী,আসে বড় মেশিন। শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও উদ্ধার অভিযান। তবে সেই অভিযানের আগেই মারা যায় চারজন শিশু। এখনও পর্যন্ত বহু শিশু আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন মনোহর থানার হাসপাতালে।
এই ঘটনার খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ঘটনার বিষয়ে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং মৃত শিশুদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বিবেক যাদব জানান, “এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্কুল পরিকাঠামো নিয়ে অবহেলা একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না।” প্রশাসনের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলগুলির একটি তালিকা তৈরি করে দ্রুত সংস্কার শুরু করা হবে।গ্রামবাসীদের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। তাঁদের দাবি, “আমরা বারবার বলেছি স্কুল বিল্ডিংটা ভাঙা, ছাদ ফাটল ধরা। তবু কেউ শুনল না। আমাদের বাচ্চারা কী দোষ করেছিল?” একজন অভিভাবক কান্নাভেজা গলায় বলেন, “সকালবেলা নিজের হাতে জল খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। কে জানত, আর ফিরে পাবে না?” স্কুলের এক শিক্ষক জানান, “ছাদে ফাটল ধরা পড়েছিল কয়েকমাস আগেই। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ পরিদর্শন পর্যন্ত করতে আসেনি।” এই অভিযোগ থেকেই স্পষ্ট যে অব্যবস্থা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।এই দুর্ঘটনা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ভগ্নচিত্র স্পষ্ট করে তোলে। ভারতে এখনো বহু সরকারি স্কুলে পরিকাঠামোর হাল এতটাই খারাপ যে শিক্ষার পরিবেশ তো নয়ই, বরং জীবন সংশয়ের আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্থানের মতো রাজ্যে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত কম, সেখানেও যদি বর্ষার সময়ে স্কুলের ছাদ ভেঙে পড়ে, তাহলে বুঝে নিতে হবে ভবনের নির্মাণগত মান কতটা নীচু মানের। শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব শুধু পাঠ্যপুস্তক বিতরণ নয়, নিরাপদ ও সুস্থায়ু পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বহু স্কুলে এখনো নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, পানীয়জলের ব্যবস্থা বা শৌচাগার। এই ঘটনাগুলো সেই চিত্রেরই প্রতিফলন।

এই ধরণের ঘটনা আর যেন না ঘটে, তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। স্কুলগুলির জরাজীর্ণ পরিকাঠামো দ্রুত চিহ্নিত করে সংস্কার করতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিদর্শন ব্যবস্থা, যেখানে প্রতি বছর স্কুল ভবনের কাঠামোগত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে এবং তার ভিত্তিতে রিপোর্ট জমা পড়বে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে একযোগে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে আর কোনো গাফিলতি নয় — এমনই দাবি উঠছে সব মহল থেকে।রাজস্থানের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রাণ হারানো একটি জাতির পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তোলে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরের ওপর। শুধুমাত্র তদন্ত, ক্ষতিপূরণ বা বিবৃতিতে দায় মিটে যায় না — প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং অবিলম্বে বাস্তবায়ন। যতদিন না পর্যন্ত নিরাপদ ও আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, ততদিন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেই — এবং প্রাণ যাবে নিষ্পাপ শিশুদের।