Rizwan’s ‘ridiculous’ comments on Members’ Trophy failure : প্রায় তিন দশক পর পাকিস্তানের মাটিতে আইসিসি ইভেন্টের আয়োজন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ নিয়ে দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ছিল অপার উচ্ছ্বাস। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে সেই উচ্ছ্বাস দ্রুতই ম্লান হয়ে যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি করাচির গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে পরাজিত হয় স্বাগতিক পাকিস্তান। এরপর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে হারের পর, ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সঙ্গে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকায়, একটিও ম্যাচ না জিতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হয় আয়োজক দেশকে।

দলের এই ব্যর্থতার পর অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান চোট সমস্যাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ফখর জামান ও সাইম আইয়ুবের চোট আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। তাদের অনুপস্থিতি দলে ভারসাম্যের অভাব তৈরি করেছে।” তবে বিশেষজ্ঞরা রিজওয়ানের এই মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, অন্যান্য দলও চোট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তবুও তারা ভালো পারফরম্যান্স করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের জসপ্রিত বুমরাহ, অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, দক্ষিণ আফ্রিকার আনরিখ নর্কিয়া চোটের কারণে টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেননি, তবুও তাদের দল ভালো ফলাফল করেছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষক রমিজ রাজা বলেন, “চোট সব দলেরই হতে পারে। এটা খেলারই অংশ। শুধু চোটকে দায়ী করা সঠিক নয়। আমাদের দলের প্রস্তুতি ও কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।” পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি বলেন, “দলের ব্যর্থতার পেছনে চোটের চেয়ে মানসিক দৃঢ়তার অভাবই বেশি দায়ী। আমাদের খেলোয়াড়দের চাপ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”
পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা দলের এই পারফরম্যান্সে হতাশা প্রকাশ করেছেন। করাচির এক সমর্থক বলেন, “আমরা এতদিন পর দেশে আইসিসি ইভেন্ট আয়োজন করলাম, কিন্তু আমাদের দল একটিও ম্যাচ জিততে পারল না। এটা খুবই লজ্জার।” লাহোরের আরেক সমর্থক বলেন, “চোটের অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দলের প্রস্তুতি ও মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
দলের এই ব্যর্থতা পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তরুণ প্রতিভাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা ও মানসিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া উচিত। এছাড়া, দলের নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে খেলোয়াড় বাছাই করা উচিত।

সাবেক কোচ মিকি আর্থার বলেন, “পাকিস্তানের ক্রিকেটে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু সেই প্রতিভাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। ঘরোয়া লিগের মান উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের কোচিং স্টাফ নিয়োগ করা জরুরি।” পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি বলেন, “আমরা দলের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনব। সমর্থকদের হতাশা আমরা বুঝতে পারি এবং তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা ভালো করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে পাকিস্তানের এই ব্যর্থতা শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই একটি শিক্ষা। চোট, প্রস্তুতি, মানসিক দৃঢ়তা—সবকিছুই খেলার অংশ। শুধুমাত্র অজুহাত দিয়ে নয়, বাস্তব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেটের উত্থান-পাতনের এই গল্পটি ভবিষ্যতে দলকে আরও শক্তিশালী ও প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।