Wednesday, July 30, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসপুনর্বহাল অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা !

পুনর্বহাল অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা !

Restore the security of Anubrata Mandal!:পুনর্বহাল অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা!

পটভূমি

বীরভূম জেলার রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডল এক প্রভাবশালী নাম। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে তিনি জেলার সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছেন, আর সেখানকার রাজনৈতিক চালচিত্র অনেকটাই তার উপস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত। তবে গত কয়েক বছরে নানা অভিযোগ ও বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন অনুব্রত মণ্ডল। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক যেন অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে, যার জেরে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর নিরাপত্তা। এমন এক নেতার নিরাপত্তা হ্রাস একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের মনেও।

ঘটনার বিবরণ

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফর শেষ হওয়ার পরেই পাল্টে যায় চিত্র। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আবারও অনুব্রত মণ্ডলকে দেওয়া হয়েছে ‘ওয়াই প্লাস উইথ কট’ (Y+ with escort) পর্যায়ের নিরাপত্তা। এর অর্থ, আগের মতোই তাঁর সঙ্গে থাকবে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দল, বাড়ির নিরাপত্তাও থাকবে কড়া নজরদারিতে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, গতকাল রাত থেকেই এই নতুন নিরাপত্তা বলবৎ হয়েছে। রাতের আঁধারেই পৌঁছে গিয়েছেন দেহরক্ষীরা, শুরু হয়েছে নজরদারি। আবারও সেই পুরনো কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ফিরে এলেন অনুব্রত।

সরকারি প্রতিক্রিয়া

সরকারি স্তরে এই বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি প্রশাসন। তবে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক জানান, “প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে নিরাপত্তা পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা একান্তই অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত।”

তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তা দেওয়া বা প্রত্যাহার করার বিষয়ে আমরা সময়ে সময়ে পরিস্থিতি বিচার করে ব্যবস্থা নিই। অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।”

স্থানীয় মতামত

এই নিরাপত্তা পুনর্বহালের ঘটনাকে ঘিরে তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে বীরভূমের রাজনৈতিক মহলে। একজন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক পরে এই সিদ্ধান্ত কাকতালীয় হতে পারে না। এটা একটা বার্তা হতে পারে—যা দলের ভিতরে-বাইরে, দুই জায়গায় প্রভাব ফেলবে।”

স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “অনুব্রতদা তো আমাদের অভিভাবকের মতো। উনি নিরাপদ থাকলে আমরাও আশ্বস্ত থাকি। সরকার সঠিক কাজই করেছে।”

অন্যদিকে, বিরোধীদের মতে এই ঘটনা “প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্বের” উদাহরণ। বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, “আইনের চোখে সকলেই সমান। একজনের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ ওঠে, তখন তাকে নিরাপত্তা কমানো হয়। আবার রাজনৈতিক প্রয়োজনে তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে মানুষের প্রশাসনের ওপর ভরসা উঠে যাবে।”

বিশ্লেষণ

এই ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে আছে রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত। প্রথমত, আইসিকে গালিগালাজের মতো ঘটনায় নিরাপত্তা হ্রাস করা একটি কঠিন বার্তা ছিল—দল ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়াস।

দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরে নিরাপত্তা পুনর্বহালও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অনুব্রতর প্রতি দলের আনুগত্য ও সমর্থনের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে যেখানে জেলা রাজনীতিতে তিনি এখনও গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি, সেখানে তাঁকে দূরে রাখা দলকে ব্যাকফুটে ফেলতে পারে।

এছাড়াও, ভোটের আগে দলের সংগঠন মজবুত করতে তৃণমূল আবারও অনুব্রতের ওপর ভরসা রাখছে—এমনটাও বলা হচ্ছে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তরফে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

বোলপুর-সহ গোটা বীরভূম জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সমীকরণ আগামী দিনে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। একদিকে তাঁর বিরুদ্ধে চলা তদন্ত, অন্যদিকে দলের সংগঠনে তাঁর অবদান—এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই নির্ধারিত হবে তাঁর ভবিষ্যৎ।

সরকারের এই নিরাপত্তা পুনর্বহাল সিদ্ধান্ত হয়তো কিছুটা স্থিতিশীলতা এনে দেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামনে পঞ্চায়েত বা বিধানসভা ভোট থাকলে এই ধরনের পদক্ষেপ অনেক বড় বার্তা বহন করে।

উপসংহার

শেষমেশ, অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা পুনর্বহাল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা অস্বীকার করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরপরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হওয়ায় এটি নিছক কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তবে এর ফলে জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে কি না, তা সময়ই বলবে। আপাতত আবারও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ফিরে গেছেন অনুব্রত মণ্ডল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments