Resorts locked, tourist spots closed as Indian army operation begins in Kashmir : কাশ্মীর উপত্যকায় ফের অশান্তির ছায়া। পহেলগাঁওতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাঙ্গা করতে গোটা কাশ্মীর জুড়ে শুরু হয়েছে বড়সড় সেনা অভিযান। আর সেই সঙ্গে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৮৪টিই আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে টুরিস্ট এবং স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে। জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় রিসোর্টগুলি, বিশেষ করে পহেলগাঁও, গুলমার্গ, সোনমার্গ, ওয়াচি, শ্রীনগর লেকসাইড এবং অন্যান্য জনপ্রিয় জায়গাগুলি এখন পর্যটকশূন্য। বড় বড় রিসোর্টগুলিতে ঝুলছে তালা।

সেনার তরফে বলা হয়েছে, এখনো বেশ কয়েকজন জঙ্গি বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে রয়েছে এবং তাঁদের ধরতেই চলছে তল্লাশি অভিযান। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা পর্যটকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্ত স্পট বন্ধ থাকবে।” জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছেন, “কাশ্মীরে শান্তি বিঘ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টা আমরা কঠোর হাতে দমন করব। দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পহেলগাঁও হামলার পরে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশবাসীর একটা বড় অংশ মনে করছেন, পর্যটন শিল্প, যা কাশ্মীরের অন্যতম আয়শক্তি, তা যদি এভাবে বারবার জঙ্গি হামলার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হবে। কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসায়ী ইউনিয়নের সভাপতি বিলাল আহমেদ জানিয়েছেন, “আমরা দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের আগমন বাড়তে দেখেছিলাম। এবছরও পর্যটন মরশুম দারুণ হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু এই ধরনের ঘটনার জন্য আবার সব কিছু পিছিয়ে গেল।” স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রিয়াজ লোন বলেন, “যখনই কাশ্মীরে একটু স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়, তখনই এই ধরনের হামলা আমাদের ফের কয়েক বছর পিছিয়ে দেয়। হাজার হাজার মানুষ এখন বেকার হয়ে পড়বে।” সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র এপ্রিল মাসেই কাশ্মীরে প্রায় ৩ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে এসেছিলেন। এর ফলে রাজ্যের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। কিন্তু এখন সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
সেনা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কাশ্মীরের দক্ষিণ অংশ বিশেষ করে অনন্তনাগ, পুলওয়ামা, শোপিয়ান, কুপওয়ারা অঞ্চলে ব্যাপক তল্লাশি চলছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, সেনা টহল বেড়েছে, রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমনকি ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল টিমও একযোগে তদন্ত শুরু করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্থানীয় মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শ্রীনগরের এক বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন বললেন, “আমরা শান্তি চাই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা চাই। বারবার হামলার জন্য কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।” বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাশ্মীরের অর্থনীতির একটা বড় অংশ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তাই দীর্ঘ সময় পর্যটন বন্ধ থাকলে শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষই নয়, রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোতেও বড়সড় প্রভাব পড়বে। তবে প্রশাসনের দাবি, কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পর্যটন শিল্প আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। তবে আপাতত জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এক গভীর অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে।