Residents protest over lift accident in Durgapur: বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের তপোবন সিটি আবাসনে ঘটে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যা পুরো এলাকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এক আবাসিক লিফ্টে চড়ে নামছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই লিফ্টের তার ছিঁড়ে নিচে পড়ে যান তিনি। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি হাসপাতালে। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা আবাসন এলাকা।আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং অভিযোগ তোলেন যে দীর্ঘদিন ধরেই লিফ্টের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করছে আবাসন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, লিফ্টটি দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাগ্রস্ত ছিল, কিন্তু বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তা মেরামতের ব্যবস্থা করেনি। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুক্রবার সকালে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আবাসনের বাসিন্দারা। তাঁরা আবাসন কর্তৃপক্ষের অফিস ঘেরাও করেন এবং চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক বাসিন্দার কথায়, “এটা তো আমাদের জীবনের সঙ্গে খেলা! আমরা প্রতিদিন লিফ্ট ব্যবহার করি। যদি কর্তৃপক্ষ আগে ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটত না।”
কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়ে আবাসিকরা আবাসন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং দাবি তোলেন, যতক্ষণ না সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ এই অফিস খুলতে দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ও পুলিশকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হয়। পুলিশ আশ্বাস দেয় যে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা আরও অভিযোগ তুলেছেন যে, দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি আবাসনে লিফ্টের রক্ষণাবেক্ষণে চূড়ান্ত অবহেলা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় লিফ্টের তার এবং যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন করা হয়নি, অথচ আবাসিকদের কাছ থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ফি নেওয়া হচ্ছে। একজন বাসিন্দার কথায়, “আমরা মাসে হাজার হাজার টাকা মেইনটেনেন্স ফি দিচ্ছি, কিন্তু তার বিনিময়ে সুরক্ষা পাচ্ছি না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়?”
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনাটি কেবল দুর্গাপুরের নয়, বরং পুরো দেশের বহুতল আবাসনের জন্য একটি বড় শিক্ষা হওয়া উচিত। লিফ্ট রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা অনেক সময়ই অনুসরণ করা হয় না, যার ফলে এ ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “লিফ্টের তার, মোটর, ব্রেকিং সিস্টেম সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতি মাসে অন্তত একবার পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বহু আবাসনে বছর বছর মেরামত করা হয় না।”এই ঘটনার পর দুর্গাপুরের অন্যান্য আবাসনের বাসিন্দারাও নিজেদের বিল্ডিংয়ের লিফ্ট পরীক্ষা করাতে শুরু করেছেন। অনেকেই বলছেন, প্রশাসন যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুরের আবাসনগুলোর লিফ্ট পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, দুর্গাপুরের এই ঘটনা আবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীলতায় কতটা পরিবর্তন আনে। আবাসিকদের দাবিগুলো কতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় এবং সত্যিই কি ভবিষ্যতে লিফ্ট রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হয়, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে আপাতত দুর্গাপুরের তপোবন সিটি আবাসনের বাসিন্দারা তাদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছেন।