Residents of Djerba protest over pollution in Raniganj industrial area: রানীগঞ্জের বক্তারনগর এলাকায় দূষণ এখন এমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যা এলাকাবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। শনিবার বিকেলে বক্তারনগর এলাকায় একটি বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার গেটে শতাধিক গ্রামবাসী বিক্ষোভ দেখান। তাদের অভিযোগ, কারখানাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মবিধি মানছে না এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি না চালিয়েই কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে বক্তারনগর, পলাশবন এবং বাবুশোল অঞ্চলে মারাত্মক দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে, যা স্থানীয়দের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মধুসূদন বিশ্বাস জানান, “আমাদের জীবনে দূষণের কারণে একরকম অভিশাপ নেমে এসেছে। আমাদের সন্তানরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা দূষণের হাত থেকে রেহাই চাই।” আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রিনা দেবী বলেন, “দূষণের প্রভাবে আমাদের এলাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। কারখানাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেয় না। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ চাই।”
রানীগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল। এখানে বহু কারখানা রয়েছে, যা এলাকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই শিল্পকারখানার দূষণ এলাকাবাসীর জন্য এক বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষত, বক্তারনগর অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, চোখে জ্বালা ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ।

সন্ধ্যার দিকে বক্তারনগর, পলাশবন এবং বাবুশোল অঞ্চলের কয়েকশ গ্রামবাসী কারখানার গেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে স্লোগান তোলেন এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা চাই কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হোক। আমাদের এলাকায় সুস্থভাবে বসবাস করার অধিকার রয়েছে।”
এদিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তারা বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একজন প্রতিনিধি জানান, “আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। যদি কারখানাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, দূষণের কারণে তাদের জীবনে নানা জটিল রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। অনেকেই শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এলাকার স্কুল শিক্ষক রমেশ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দূষণের কারণে স্কুলে আসতে পারছে না। তাদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক।”
রানীগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাথে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এলাকার মানুষের সমস্যা সম্পর্কে অবগত। আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাই।”
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা দূষণের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চালিয়ে যাবেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এছাড়া, দূষণের ফলে স্থানীয় জলাশয় এবং মাটি দূষিত হয়ে পড়েছে। কৃষিকাজেও এর প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় কৃষক মহাদেব ঘোষ বলেন, “আমাদের ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। মাটি দূষণের কারণে ফসল ভালো হচ্ছে না। আমাদের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় বাসিন্দারা সরকার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান করবে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে এবং রানীগঞ্জের এই অঞ্চল আবার দূষণমুক্ত হয়ে ওঠে।