Kalinga Cup: Red and Yellow Army’s ‘dream’ shattered by exit : কলকাতা ময়দানের এক ঐতিহাসিক নাম, শতাব্দী প্রাচীন আবেগ—ইস্টবেঙ্গল। সেই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের জন্য ২০২৫-এর শুরুটা যেন একের পর এক ধাক্কা। আইএসএলে ব্যর্থতার পর এবার কলিঙ্গ সুপার কাপে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে ২-০ গোলে হার, তার ওপর গোটা ম্যাচে একটাও অন টার্গেট শট না নিতে পারা—সব মিলিয়ে লাল-হলুদ শিবির যেন ছায়াসঙ্গী হয়ে গেছে ব্যর্থতার। ফুটবলপ্রেমীরা যেখানে চেয়েছিলেন একটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, সেখানে পাওয়া গেল একরাশ হতাশা আর গড়িয়ে পড়া স্বপ্ন। গতবার এই প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই দলই এবার গ্রুপ পর্বেই ছিটকে গেল, এবং এই হারের অভিঘাত শুধু টিমে নয়, পড়ছে সমর্থকদের মনের গভীরে, ক্লাব কর্তাদের মুখেও চাপা অসন্তোষ। কোচ অস্কার ব্রজো, যিনি লাল-হলুদ শিবিরে এসেছিলেন বড় স্বপ্ন নিয়ে, তিনিও এই হার মেনে নিতে পারছেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “ছেলেরা চেষ্টা করেছে, তবে আমাদের আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এই ধরনের ম্যাচে ছন্দ না পেলে জেতা যায় না।” কোচের বক্তব্য যতই বাস্তব হোক না কেন, প্রশ্ন উঠছেই—এই পারফরম্যান্সের পেছনে কি কেবল ছন্দ হারানো, নাকি আরও গভীরে লুকিয়ে রয়েছে দলের কৌশলগত দুর্বলতা, খেলোয়াড় বাছাইয়ের ভুল, কিংবা মাঠের বাইরে কোনো অসঙ্গতি? সুপার কাপটা জিততে পারলে আবার সুযোগ থাকত এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-টু’র প্লে-অফ খেলার, যা কোচ ও ম্যানেজমেন্ট উভয়েরই অন্যতম লক্ষ্য ছিল। সেই স্বপ্নটাও এবার ভেসে গেল কুয়াশার মধ্যে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএসএলে পরপর হার আর ডিফেন্স ও মিডফিল্ডে ছন্নছাড়া খেলা সুপার কাপে ব্যর্থতার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল। ফুটবল বিশ্লেষক অর্ণব ঘোষ বলেন, “এটা শুধু হারের গল্প নয়, এটা একরকম সতর্কবার্তা—যদি এখনই না জাগে ইস্টবেঙ্গল, তবে ভবিষ্যতেও একই ছবি দেখতে হবে।” ক্লেইটন সিলভা, যিনি গতবার কলিঙ্গ সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের নায়ক ছিলেন, তিনিও যেন এবার চেনা ছন্দে ছিলেন না। গোটা দল যেন একটা অদৃশ্য চাপে ভুগছিল। কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচে পুরো খেলাতেই লাল-হলুদ বাহিনীকে দেখা গেল দিশেহারা, হতাশ, এবং ছন্দহীন। ডিফেন্স লাইন ভেঙে পড়ছিল বারবার, মিডফিল্ডে পাস কনভার্সন ব্যর্থ হচ্ছিল বারংবার। কেরালা ব্লাস্টার্সের খেলোয়াড়েরা বারবার আক্রমণ তুলেছেন, আর ইস্টবেঙ্গল যেন কোনও ছকই তৈরি করতে পারেনি প্রতিরোধের জন্য। ম্যাচের পর লাল-হলুদ সমর্থকদের চোখে জল, মুখে বিষণ্ণতা। “এই দল কি সেই ইস্টবেঙ্গল? যাদের জন্য বুক চিতিয়ে চিৎকার করতাম?”—বললেন এক প্রবীণ সমর্থক।
আর এক তরুণ সমর্থক বললেন, “দলটা যেন নিজের পরিচয়টাই হারিয়ে ফেলেছে। এখন আর জয় নয়, একটা গোলে খুশি হতে হয়।” ক্লাবের অভ্যন্তরে এই হারের পর আলোচনা শুরু হয়েছে কোচ বদলের সম্ভাবনা নিয়েও। যদিও ম্যানেজমেন্টের তরফে এখনই কিছু বলা হয়নি, তবে বোর্ডের এক সদস্য নাম না করে জানিয়েছেন, “আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। যেখানে সমস্যা, সেখানে পরিবর্তন আনা হবেই।” এবার প্রশ্ন—এই হার কেবল একটি প্রতিযোগিতার পরাজয়, নাকি একটি সংকেত, যে গোটা কাঠামোতেই পরিবর্তন দরকার? কলকাতার ফুটবল মানেই আবেগ, মানেই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী—ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান। যখন একদিকে মোহনবাগান হেসো মোলিনার নেতৃত্বে দুর্দান্ত ফর্মে, তখন ইস্টবেঙ্গলের এই হারের ধাক্কা সমর্থকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। একই শহরের দুই ক্লাবের এই বিপরীত ছবি যেন আরও বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে লাল-হলুদ প্রেমীদের। তবে আশার আলো একটাই—ইতিহাস। ইস্টবেঙ্গল শতবর্ষী ক্লাব, বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী। হয়তো এখনকার দল ব্যর্থ, তবে বারবার প্রমাণ হয়েছে, এই ক্লাব ঘুরে দাঁড়াতে জানে। এর আগে বহুবার খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে নতুন করে জেগে উঠেছে তারা। সমর্থকরাও তা জানেন। তাই চোখে জল নিয়ে স্টেডিয়াম ছেড়ে গেলেও তারা বলে যাচ্ছেন—“ভালো দিন আবার আসবে।” কিন্তু সেই ভালো দিন আনতে গেলে প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, প্রয়োজন নতুন করে দল গড়া, আর সবচেয়ে বড় কথা, খেলোয়াড়দের মধ্যে হার না মানার মানসিকতা গড়ে তোলা। মাঠে নামার আগে বুকের ভেতর সেই লাল-হলুদের জন্য গর্ব বয়ে নিয়ে নামতে হবে। তবেই আবার ফিরবে সেই দিন, যখন ইস্টবেঙ্গলের খেলা মানেই গ্যালারিতে উৎসব, গোল মানেই উৎসব, আর প্রতিটি ম্যাচ মানেই একটা ইতিহাসের অংশ হওয়া।