Red alert issued for severe flood situation in North Sikkim:উত্তর সিকিমের পাহাড়ি জনপদে যেন নেমে এসেছে প্রকৃতির রুদ্ররূপ। টানা ভারী বর্ষণে তিস্তা নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়েছে একের পর এক রাস্তা, বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার রাতভর বৃষ্টিতে তিস্তার জল বিপদসীমার অনেক উপরে উঠে গেছে, ফলে মঙ্গন, গিয়ালশিং, সোরেং সহ একাধিক জেলায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা।
ফিদাং গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে, ডিকচু ও সিংথাম এলাকায় তিস্তার জলস্তর ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। টুং চেকপোস্ট, লেগশিপ, কিউজিং সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ধস নামায় সেগুলি বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সিকিম সরকার উত্তর সিকিমের মঙ্গন জেলায় ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে, সমস্ত দফতরকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিস্তা নদীর আশেপাশের ডিকচু ও সিংথাম এলাকার বাসিন্দাদের জন্য জারি হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর, তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিস্তার পরিস্থিতির জেরে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার চুংথাং থেকে মুন্সিথাং যাওয়ার পথে একটি পর্যটকবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ১০০০ ফুট নীচে তিস্তা নদীতে পড়ে যায়। গাড়িটিতে মোট ১১ জন পর্যটক ছিলেন, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ত্রিপুরার বাসিন্দা ছিলেন। এখনও পর্যন্ত একজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, দু’জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিদের এখনও খোঁজ মেলেনি।
উদ্ধারকাজে নেমেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (ITBP), সিকিম পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দল। তবে তিস্তার রুদ্ররূপ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে উত্তর সিকিমে পর্যটকদের ভ্রমণ পারমিট ইস্যু করা বন্ধ রাখা হয়েছে। সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ভারী বর্ষণের জেরে একাধিক জায়গায় ভূমিধস নেমেছে। বন্ধ হয়েছে চুংথাং যাওয়ার রাস্তা। সিকিম প্রশাসনের তরফে লাচুং, লাচেন সহ গোটা উত্তর সিকিম ভ্রমণের পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, ভুটান পাহাড়েও অতিভারী বর্ষণের সতর্কতা জারির ফলে উত্তরের ডুয়ার্স এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের তরফে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে পাহাড়-সমতলের একাধিক জায়গায় অতিভারী বৃষ্টিপাতের জেরে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, সংকোশ, রায়ডাক-সহ প্রতিটি নদীর জলস্তর বাড়ছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই আমাদের কর্তব্য।