Sunday, July 6, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতি কূটনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও রেকর্ড বাণিজ্য ভারত পাকিস্তানের মধ্যে

 কূটনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও রেকর্ড বাণিজ্য ভারত পাকিস্তানের মধ্যে

Record trade between India and Pakistan despite diplomatic tensions :যুদ্ধং দেহি মনোভাব, সীমান্তে গোলাগুলি, জঙ্গি হামলার জেরে রক্তাক্ত পুলওয়ামা, উরি কিংবা অপারেশন সিঁদুরের প্রতিশোধে ভারত-পাক সম্পর্ক যখন একের পর এক সংকটে জর্জরিত, তখন সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম তৈরি করছে বাণিজ্য। কূটনৈতিক উত্তেজনা, সেনা সংঘর্ষ বা আন্তর্জাতিক মহলে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-প্রতিযোগের মধ্যেও থেমে নেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পণ্যের আদানপ্রদান। বরং নতুন করে চমক দিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। তারা জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসে ভারত থেকে পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। অন্যদিকে, একই সময়ে ভারতে পাকিস্তানের রপ্তানি মাত্র ৪ কোটি ২৭ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত বৈষম্যের পরিসংখ্যান ঘিরে যেমন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কূটনৈতিক মহলে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে—বাণিজ্যের এই গতি কি তাহলে শান্তির বার্তাবাহক?

Z

এখানে লক্ষণীয়, পাকিস্তানে ভারতের সরাসরি রপ্তানির পাশাপাশি পরোক্ষ রপ্তানির মাত্রাও অনেক বেশি। ‘ডন’ পত্রিকায় প্রকাশিত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্যের একটি বড় অংশ পাকিস্তানে পৌঁছচ্ছে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে—বিশেষত দুবাই, সিঙ্গাপুর, কলম্বো এই ঘুরপথ হয়ে। ফলে সরকারিভাবে যা হিসাব, বাস্তবে তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি ভারতীয় সামগ্রী পাকিস্তানের বাজারে প্রবেশ করছে। আর এই খবরে পাকিস্তানের নিজস্ব অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে করাচির প্রাক্তন বাণিজ্যিক বিশ্লেষক আবিদ হাসান বলেন, “দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন রয়েছে, তেমনি বাস্তব বাজারে ভারতীয় পণ্যের জনপ্রিয়তা প্রবল। বিশেষ করে ওষুধ, রাসায়নিক, কাপড় ও কৃষিপণ্যে ভারতের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল পাকিস্তান।” একই সুর শোনা গেছে লাহোরের আমদানিকারক মাহমুদ আলি-র গলাতেও—“ভারতের তুলনায় চিনা পণ্য বেশি দামে পাওয়া যায়। আবার ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে আনা মানে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই বাণিজ্যিকভাবে ভারত অনেক বেশি সুবিধাজনক।”

তবে এই বাণিজ্য সম্পর্ক ঘিরে নানান রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। ভারতের তরফে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক প্রকার ভেঙেই পড়ে। সেই সময় প্রায় সমস্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু ঘুরপথে, বেসরকারিভাবে কিংবা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য প্রবেশ বন্ধ করা যায়নি। বরং বেড়েছে। এটা একধরনের ‘শেডো ট্রেড’, যা সরকারি স্তরে স্বীকৃত নয়, কিন্তু বাস্তব বাজারে ততটাই সক্রিয়।

নয়াদিল্লি এখনও এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক প্রাক্তন আধিকারিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, “পণ্য বাণিজ্য বন্ধ করে দিলে ক্ষতি হয় দু’দিকেই। আর যেহেতু এখন একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান চাপের মুখে পড়েছে, তাই অর্থনৈতিক খাত দিয়ে সম্পর্ক কিছুটা সচল রাখার প্রবণতা পাকিস্তানেরও রয়েছে।” এক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি ও ওষুধ শিল্প সবথেকে বেশি উপকৃত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত থেকে চিঁড়ে, চাল, শুঁটকি, চিকিৎসার কাঁচামাল—সব কিছুই পাক মাটিতে পৌঁছচ্ছে, সেটাও এমন সময় যখন সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে।

20250706 0318 Trade Surges Amid Tensions simple compose 01jzeand7dehvat60kr40aqkq5

স্থানীয় মহলে এর নানা প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। কলকাতার এক্সপোর্টার এবং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রদীপ আগরওয়াল বললেন, “বাণিজ্য রাজনীতি চায় না। লাভ হলে পথে বাধা আসে না। পাকিস্তানে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা অনেক আগে থেকেই ছিল। এখন হয়তো আরও বেড়েছে।” আবার দিল্লির এক বাণিজ্য গবেষক স্বাতী মেহতা বলেন, “এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার মধ্যে দিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ তৈরি হতে পারে। তবে তার জন্য উভয় দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি।”

তবে সন্ত্রাসবাদ এবং সামরিক হুমকির মতো বিষয় যখন বারবার সামনে আসে, তখন কি শুধুমাত্র বাণিজ্য দিয়ে সমীকরণ মেরামত সম্ভব? একাংশের মতে না। তাঁদের বক্তব্য, ভারতের জনগণের এক বড় অংশ এখনও পাকিস্তানকে বিশ্বাস করে না। বিশেষ করে যখনই কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ বা সেনা মৃত্যুর খবর সামনে আসে, তখন এ ধরনের খবর ভারতীয় জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরি করে।

যদিও অন্য পক্ষ বলছে, এই বাণিজ্য যদি নিয়মতান্ত্রিক হয়, এবং এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়, তাহলে সেটিকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। কারণ রাজনৈতিক সম্পর্ক ভাঙলেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেক সময় আগাম শান্তির ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহৎ পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রায় ভেঙে পড়া অবস্থায় থেকেও, ঘুরপথে বা বিকল্প মাধ্যমে রেকর্ড লেনদেন যে আশার আলো দেখাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। বরং এটা প্রমাণ করে দিল, অস্ত্রের ছায়া যতই দীর্ঘ হোক না কেন, অর্থনীতি ঠিকই নিজের পথ খুঁজে নেয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments