Ram temple decorated for Ram Navami, complete arrangements underway:আগামী ৬ এপ্রিল গোটা দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র দিন — রাম নবমী। আর সেই উপলক্ষে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি মন্দির এখন যেন এক স্বর্গসদৃশ দৃশ্য! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্তদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠছে পুরো শহর, আর অচেনা এক সাজে রঙিন হয়ে উঠেছে মন্দির চত্বর থেকে আশেপাশের প্রতিটি অলিগলি। অযোধ্যা এখন যেন শুধুই এক ধর্মীয় শহর নয়, বরং এক সংস্কৃতি, আবেগ ও ঐতিহ্যের মিলনক্ষেত্র। অযোধ্যাবাসী থেকে শুরু করে সারা দেশ থেকে আগত ভক্তরা যেন বলছেন — “এই উৎসবটা শুধুই পূজা নয়, এটা আমাদের ভক্তি, বিশ্বাস আর রামচন্দ্রের প্রতি অপার শ্রদ্ধার প্রতিচ্ছবি।” রাম নবমী মানেই, ভগবান রামের আবির্ভাব দিবস। হিন্দু পুরাণ মতে, ঠিক দুপুর ১২টায় ভগবান শ্রী রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আর তাই ওই মুহূর্তটি বিশেষভাবে পালন করা হবে রামমন্দিরে। পূজা-পাঠ, আবির, পুষ্পার্ঘ্য, ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠবে গোটা মন্দির চত্বর।রাম মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে উৎসবটি সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রস্তুতি। মন্দিরের মুখ্য ট্রাস্ট শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট জানিয়েছে, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ভক্তদের যাতায়াত, দর্শন, প্রসাদ গ্রহণ — প্রতিটি ক্ষেত্রেই কড়া নজরদারি ও সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। “আমরা চাই, প্রত্যেক ভক্ত যেন নির্ভয়ে, শান্তিতে ও আনন্দে এই উৎসব উপভোগ করতে পারেন,” বললেন মন্দির ট্রাস্টের মুখ্য কর্মকর্তা চম্পত রাই।
রাম মন্দিরে বর্তমানে প্রতিদিনই প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আসছেন। আর রাম নবমীর দিন সেই সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৩ লক্ষেরও বেশি। সেইজন্য পুলিশ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী, ডাক্তারি দল, এবং দমকল বিভাগ মিলিয়ে বড়সড় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে, অযোধ্যার মূল রাস্তা ও মন্দির প্রাঙ্গণকে সাজানো হয়েছে লাল গালিচা দিয়ে, জ্বালানো হয়েছে হাজারো রঙবেরঙের আলো, টাঙ্গানো হয়েছে ফুলের তোড়া, ব্যানার, এবং রামচন্দ্রের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। রামমন্দিরের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে জন্মভূমি কোর্ট পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় সাজসজ্জা চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। এক ভক্ত বললেন — “আমরা আগেও অযোধ্যা এসেছি, কিন্তু এবারের সাজটা একেবারে অন্যরকম। মনের মধ্যে একটা পবিত্র অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।”এছাড়াও রামনবমীর দিনে একটি বিশেষ চমক থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য। মন্দির ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,

“সূর্য তিলক” নামক এক প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার মাধ্যমে এমন এক আয়োজন করা হয়েছে, যার ফলে রাম নবমীর দুপুর ১২টার সময় সূর্যের আলো ঠিক রামলালার কপালে এসে পড়বে — যা এক অলৌকিক অনুভবের জন্ম দেবে। এই প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায়, এবং এটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। এর মাধ্যমে এক নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে উৎসবে।যারা এই দিনে অযোধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না, তাঁদের জন্যও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। দূরদর্শন ও প্রসার ভারতী-র মাধ্যমে এই উৎসব সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যাতে দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ এই পবিত্র মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারেন। এমনকি বিদেশ থেকেও বহু ভক্ত অনলাইনে এই সম্প্রচারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করছেন বলে জানা গেছে।শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, এই উৎসবের প্রভাব পড়ছে অযোধ্যার অর্থনীতি ও পর্যটন ক্ষেত্রেও। অযোধ্যার হোটেল, লজ, দোকান, খাবার হোটেল, গাইড, ট্যুরঅপারেটর, অটোচালক থেকে শুরু করে স্থানীয় বিক্রেতারা সবাই এই উৎসব ঘিরে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। স্থানীয় এক দোকানদার বললেন — “রাম নবমীর সময় যে ব্যবসা হয়, তাতে গোটা বছরের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।” প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত পানীয় জল, ভক্তদের বিশ্রামাগার, চলন্ত শৌচাগার ও স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।