Rally against promoters in Bankura to save playground:বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের রামপুরের বাউরী পাড়ায় রবিবার এক বিরাট প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হলো। এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ বাঁচাতে ‘ভূমি ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ বাঁচাও কমিটি’র ডাকে প্রায় ২০০০ মানুষ রাস্তায় নামলেন। অভিযোগ, বহু বছর ধরে এই মাঠে খেলাধুলো করে আসছে স্থানীয় বাউরী সম্প্রদায়ের মানুষ, ছোটদের ফুটবল খেলা থেকে শুরু করে গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সবকিছুই এই মাঠকে ঘিরে। তবে হঠাৎ করেই এক প্রোমোটার মাঠটি দখল করে বহুতল নির্মাণের চেষ্টা করছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। আর তাই নিজেদের ঐতিহ্য বাঁচাতে একত্র হলেন এলাকার মানুষ।এই মিছিলটি রামপুর বাজার এলাকা পরিক্রম করে, যেখানে দেখা যায় ছোট ছোট ছেলেরা রাস্তায় ফুটবল খেলছে এবং স্লোগান তুলছে, “মাঠ দিবি না তো রাস্তা দে, খেলতে দিবি না তো রাস্তা দে”। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, মাঠটি শুধু খেলার জন্যই নয়, বরং এটি গ্রামের মানুষের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মিলনস্থল। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে চলে আসা এই মাঠই আজ তাদের অস্তিত্বের প্রতীক।স্থানীয় বাসিন্দা সমীর বাউরী বলেন, “এই মাঠে আমাদের ছেলেরা ছোট থেকে খেলা শিখছে, বড় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। মাঠ চলে গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় খেলবে? আমরা সেটা হতে দেব না।” একই সুর শোনা গেল প্রতিবাদী নারী মায়া হাঁসদার গলায়, “আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলো করতে ভালোবাসে, মাঠটা হারালে ওদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন করছি, দয়া করে মাঠটি বাঁচান।”
এই আন্দোলনে শুধু স্থানীয় মানুষই নয়, পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজকর্মী, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। বাঁকুড়ার ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিত্ব তপন মাহাতো বলেন, “গ্রামে খেলার মাঠ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শহর বা গ্রামে মাঠ না থাকলে ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়রা কোথায় তৈরি হবে? যারা এই মাঠ বিক্রির পরিকল্পনা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”অন্যদিকে, প্রোমোটার সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মাঠটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি, এবং তারা সমস্ত নিয়ম মেনেই সেটি কিনেছেন। যদিও গ্রামবাসীদের বক্তব্য, “এই মাঠ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না, কারণ বহু বছর ধরে এটি গ্রামবাসীদের ব্যবহৃত জায়গা।”এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন প্রতিবাদকারীরা। স্থানীয় বিধায়ক এবং পঞ্চায়েতের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, যদি দ্রুত প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মাঠটি হারিয়ে যাবে এবং এলাকার শিশু ও তরুণদের খেলাধুলার জায়গা থাকবে না। তাই তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “প্রয়োজনে আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামবো, কিন্তু এই মাঠ ছাড়ব না।”এই ধরনের ঘটনা বাংলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই ঘটে চলেছে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খেলার মাঠ দখল করে প্রোমোটিং ব্যবসা করা এক সাধারণ চিত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “খেলার মাঠ সংরক্ষণ করা শুধু সামাজিক প্রয়োজনই নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া বিকাশের জন্যও জরুরি। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করে খেলার মাঠগুলিকে সংরক্ষণ করা।”