Rain in the middle of Puja! Heavy rain forecast in South Bengal: দুর্গাপূজা মানেই বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। শহর থেকে গ্রাম, গলি থেকে মহল্লা—চারিদিকে আলো, সাজসজ্জা আর ভিড়ের ভিন্ন রঙে ভরে ওঠে বাংলার প্রতিটি কোণ। বছরভর প্রতীক্ষার পর এই ক’দিনের আনন্দে ভাসে মানুষ। তবে উৎসবের এই আবহে যদি বৃষ্টি এসে পড়ে, তখন ভক্তি আর আনন্দের সঙ্গে যোগ হয় একরাশ দুশ্চিন্তাও। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর কয়েকদিন আগেই সতর্ক করেছিল, এবারের পুজোয় দক্ষিণবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি নামতে পারে। সেই পূর্বাভাসই এখন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। বিশেষত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুরে বৃষ্টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইবে বলে জানা গেছে।
আজ সোমবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতাতেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি নামতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলবে বলে দপ্তরের বার্তা। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে স্থানীয়ভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।আবহাওয়া দপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলের ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং সেটি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তার করবে। এর ফলেই আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, বিহার এবং অসমের উপরও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আবহবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বৃষ্টি আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে।

পুজোর আগে এমন পূর্বাভাসে উদ্বিগ্ন শহরবাসী ও জেলা-বাসীরা। কলকাতার এক গৃহবধূর কথায়, “সারা বছর ধরে পুজোর কেনাকাটা আর আনন্দের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু যদি বৃষ্টি হয়, তবে ঠাকুর দেখা থেকে শুরু করে বাইরে বেরোনো সবকিছুই ভেস্তে যাবে।” অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক মণ্ডপ কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিবারই বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে জলনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখি। তবে এমন সময়ে ভারী বৃষ্টি হলে দর্শনার্থীর ভিড় অনেকটাই কমে যায়, যা আমাদের জন্য চিন্তার।”অন্যদিকে, গ্রামের মানুষদেরও উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষত কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পুজোর সময়ে ধানের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত দায়ী বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত। পুজোর সময় দক্ষিণবঙ্গে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়, তবে এবারের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কলকাতার বর্তমান তাপমাত্রা ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৭০ থেকে ৯৭ শতাংশে ঘোরাফেরা করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। অর্থাৎ বৃষ্টি হলেও গুমোট ভাব এবং আর্দ্রতা কমবে না।বৃষ্টি একদিকে যেমন মানুষের স্বাভাবিক উৎসবের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, অন্যদিকে কৃষিক্ষেত্রে মিশ্র প্রভাব ফেলতে পারে। যেসব ফসল বাড়তি জলের প্রয়োজন, সেগুলি উপকৃত হতে পারে। তবে ধান বা সবজি চাষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বৃষ্টি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে। নতুন নিম্নচাপ তৈরি হলে উৎসবের মাঝেই দক্ষিণবঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে পুজো উদ্যোক্তা থেকে সাধারণ মানুষ—সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। মণ্ডপ কমিটিগুলির উচিত জলনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে রাখা এবং দর্শনার্থীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

দুর্গাপূজার আনন্দে ভাসতে প্রস্তুত দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। কিন্তু প্রকৃতি এবার যেন অন্য পরিকল্পনা করছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস স্পষ্ট—বৃষ্টি হবে, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াও। এর প্রভাব পড়তে পারে পুজোর রঙিন আয়োজন ও মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায়। তবে সতর্ক থাকলে এবং আগাম প্রস্তুতি নিলে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শেষ পর্যন্ত মানুষ আশা করছে, বৃষ্টির মধ্যেই আনন্দের ছোঁয়া খুঁজে নেবে বাঙালি, আর দেবী দুর্গার আরাধনায় ভেসে যাবে চারিদিক।