Friday, May 2, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য মাধ্যমিকে প্রথম রায়গঞ্জের আদৃত

 মাধ্যমিকে প্রথম রায়গঞ্জের আদৃত

Raiganj’s Adrit wins first place in secondary school:সাফল্য কার মুখ চায় না? কিন্তু যখন সাফল্য আসে একেবারে রাজ্যের সেরা হিসেবে, তখন সেটা শুধু নিজের নয়, গোটা এলাকার গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনটাই ঘটেছে রায়গঞ্জের করোনেশন হাই স্কুলের ছাত্র আদৃত সরকারের ক্ষেত্রে। সদ্য প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে রাজ্যজুড়ে প্রথম হয়েছে সে, নম্বর ৬৯৬! অর্থাৎ ৯৯.৪৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যের শীর্ষে উঠে এসেছে এই ছাত্র, যাকে আজ রায়গঞ্জবাসী শুধু নয়, গোটা উত্তরবঙ্গ নিজেদের ছেলে বলেই দাবি করছে।

ফলপ্রকাশের পরই আবেগে ভেসেছে আদৃত ও তার পরিবার। একেবারে শান্ত স্বভাবের, সংযত ভাষায় কথা বলা ছেলেটি জানিয়েছে—প্রথম দশে থাকবে এমন আশা করলেও, একেবারে প্রথম হবে এমনটা সে ভাবতে পারেনি। আর তাই এই ফলাফল তার কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত। কিন্তু একেই সাফল্য বলে—যে কখনও জোর করে পড়েনি, কখনও কড়া নিয়মে বাঁধেনি পড়াশোনা, তার সহজ-সরল পদ্ধতিতেই আজ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আদৃত জানায়, “বাধাধরা রুটিনে বিশ্বাসী না আমি। যেটা ভালো লাগে, যেটা দরকার মনে হয়, সেইটাই পড়ি। দিনের মধ্যে যে কোনও সময় পড়ি, পড়াটা যেন একটা চাপ না হয়ে যায়, সেটা মাথায় রাখি।”

Adrit Sarkat Madhyamik 1st 2025 2025 05 fd607538fc48daece2b6dd7b8b09b175

এমন দৃষ্টিভঙ্গির ছেলেটির পছন্দের বিষয়ও আলাদা—বায়োলজি। ছোটবেলা থেকেই বায়োলজির প্রতি আগ্রহ, মানবদেহ, জীববিদ্যা এসব বিষয়ই তাকে আকর্ষণ করে। ফলে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতেও রয়েছে ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য। তবে নিজেই জানিয়ে দেয়, “উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় যদি মন বদলে যায়, অন্য কোনও বিষয় যদি আকর্ষণ করে, সেটাকেই বেছে নেব। নিজের ইচ্ছা দিয়ে যেটা ভালো লাগবে সেটাই পড়ব।”

এই অসাধারণ ফলাফলের পেছনে রয়েছে মা-বাবা এবং দিদির অফুরন্ত সহযোগিতা। তারা আদৃতকে সব সময় মন থেকে সমর্থন জুগিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা, যাদের অবদান সরাসরি স্বীকার করেছে আদৃত। “আমাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবসময় পাশে থেকেছেন, যে কোনও সমস্যায় সাহায্য করেছেন। শুধু ক্লাস নয়, পরীক্ষার আগেও আলাদা করে গাইড করেছেন। ওনারা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।”

শুধু পড়াশোনা নয়, আদৃত সাহিত্যপ্রেমীও। ক্লাসের বইয়ের বাইরেও নানা সাহিত্যের বই পড়ে সে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ—সবকিছুর প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ রয়েছে তার। এই সাংস্কৃতিক অনুরাগও তার মনন গঠনে সহায়ক হয়েছে। স্কুল ছুটির পর, পড়াশোনার ফাঁকে যখনই সময় পেয়েছে, সে বইয়ের মধ্যে ডুবে থেকেছে।

এমন অসাধারণ সাফল্যে গর্বিত শুধু পরিবার নয়, স্কুলও। করোনেশন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমাদের স্কুলের ইতিহাসে এই প্রথম একজন ছাত্র রাজ্যের প্রথম হয়েছে। এটা শুধু আদৃত নয়, স্কুলেরও সাফল্য। আমরা ওর জন্য গর্বিত। ও খুবই মনোযোগী, ভদ্র এবং পরিশ্রমী ছাত্র।”

এদিকে রায়গঞ্জ শহর জুড়ে এখন উৎসবের আবহ। বিভিন্ন পাড়ায় ব্যানার, ফেস্টুন, মিষ্টির বাক্স আর বাজির আওয়াজে আনন্দে মাতোয়ারা সকলে। শহরের বাসিন্দারা বলেন, “এই ছেলেটা আমাদের শহরের নাম উজ্জ্বল করেছে। এত ভালো রেজাল্ট শুধু স্কুল নয়, জেলার সম্মান বাড়িয়েছে।”

শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতেও আদৃতের এই সাফল্য আরও অনেক ছেলেমেয়েকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সে প্রমাণ করে দিয়েছে, রুটিনে গোঁজামিল না করে নিজের মতো করে পড়েও সাফল্য পাওয়া যায়—মন দিয়ে পড়লেই যে কোনও লক্ষ্য ছোঁয়া যায়। তার কথা থেকেই স্পষ্ট, ভালো লাগা থেকে জন্ম নেয় ভালো ফলাফল।

Hn2nMlzvSwsudQo9Tajk

রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “আদৃতের এই সাফল্য প্রমাণ করে আমাদের শিক্ষার্থীরা কতটা মেধাবী ও প্রতিভাবান। তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল। ভবিষ্যতে সে দেশের গর্ব হোক—এই কামনা করি।”

সবশেষে বলা যায়, আদৃত সরকার শুধু রায়গঞ্জ নয়, গোটা বাংলা তথা দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তার এই সহজ-সরল অথচ আত্মবিশ্বাসী পথচলা আজ প্রমাণ করল, মেধা ও নিষ্ঠা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments