Python rescued in Khattimari: সাপ দেখলেই আতঙ্ক! এই ধারণাটাই আমাদের বহু পুরনো। কিন্তু খট্টিমারির দুই যুবক অভিজিৎ ও বাপ্পী প্রমাণ করলেন, ভয় নয়—প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতাই আমাদের মানবিকতার প্রকৃত পরিচয়। বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ি জেলার মোরাঘাট রেঞ্জের গারখুটা চৌপথি এলাকায় ঘটে যায় এক ঘটনা, যা শুধুমাত্র এক অজগর উদ্ধার নয়, বরং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।সকালবেলা এক কৃষক তাঁর জমিতে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পান, বিশাল এক অজগর সাপ একটি মশারিজালের ফাঁদে আটকে রয়েছে। স্বভাবতই চারপাশে হইচই শুরু হয়ে যায়, অনেকেই আতঙ্কে পিছু হটতে থাকেন, আবার কেউ কেউ সাপটিকে মেরে ফেলার কথা ভাবেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে অন্য পথ বেছে নেন খট্টিমারির দুই সাহসী যুবক—অভিজিৎ ও বাপ্পী। তাঁরা খবর পেয়ে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে, এবং একটুও না ঘাবড়ে নিখুঁতভাবে অজগরটিকে জাল থেকে মুক্ত করেন।
খবর দেওয়া হয় বন দফতরের গোসাইহাট বিট অফিসে। বন কর্মীরা দ্রুত পৌঁছান এবং অজগরটিকে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। পরে জানা যায়, অজগরটি সুস্থ রয়েছে এবং তাকে মোরাঘাটের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বন কর্মীদের মতে, এই সাপটি প্রায় ১০ ফুট লম্বা এবং একেবারে প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের এক আধিকারিক বলেন, “এই ধরনের সাপ সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। এরা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থে প্রতিক্রিয়া জানায়। অভিজিৎ ও বাপ্পীর মতো মানুষরা আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দেন।”এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই খট্টিমারির মানুষদের মধ্যে গর্ব ও আনন্দের অনুভব দেখা দেয়। স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থসারথি সরকার বলেন, “আমরা বরাবরই বন্যপ্রাণীদের ভয় পাই। কিন্তু আজকের ঘটনার পর হয়তো ছেলেমেয়েরা জানবে—ওদেরও আমাদের মতো বাঁচার অধিকার আছে।”

একইসঙ্গে বন দফতর থেকে অভিজিৎ ও বাপ্পীর এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য তাঁদের প্রশংসা করা হয় এবং একটি প্রশংসাপত্রও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন আধিকারিক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “আমরা চাই এই রকম পরিবেশপ্রেমী সচেতন মানুষ আরও এগিয়ে আসুন। এই ধরনের সহযোগিতা ছাড়া বন দফতরের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।”এদিকে এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগে এই ধরণের সাপ ধরা পড়লে সবাই মেরে ফেলত। কিন্তু এখন যুব সমাজের কিছু অংশের পরিবেশ সচেতনতায় এমন বিপন্ন প্রাণীরাও পাচ্ছে নতুন জীবন। অভিজিৎ জানিয়েছেন, “সাপ দেখলেই মেরে ফেলার কোনও দরকার নেই। একটু সাহস ও সচেতনতা থাকলেই তাদের উদ্ধার করে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।” বাপ্পী যোগ করেন, “প্রতিটি প্রাণীরই বাঁচার অধিকার আছে। আমরা শুধু আমাদের কর্তব্যটাই করেছি।”পরিবেশ রক্ষায় এই সচেতনতা যদি রাজ্যের অন্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে একদিন হয়তো বনজ প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের যে স্বপ্ন, তা সত্যি হবে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘প্রকৃতি বাঁচাও মঞ্চ’-এর তরফে জানানো হয়েছে, তারা অভিজিৎ ও বাপ্পীর মতো পরিবেশ বন্ধুদের নিয়ে আগামী দিনে একটি সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করতে চলেছে।