Puja of 500 year old Katwa Mother Nathakur:কাটোয়ার ঐতিহ্যবাহী মা ন’ঠাকুরের পূজো শহরের ধর্মীয় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই পূজোতে রয়েছে স্থানীয় লোককথা এবং আস্থা। দীপান্বিতা কালীপুজো উপলক্ষে কাটোয়ার চারটি কালী দেবীর পুজোয় শহরবাসী মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। ক্ষেপিমা, ঝুপমা, পাকুরতলা কালী এবং তারা মায়ের পূজো উপলক্ষে শুধু কাটোয়াই নয়, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে।
কাটোয়ার ক্ষেপিমা, ঝুপমা এবং পাকুরতলা কালী শহরের প্রাচীন ও জাগ্রত দেবী হিসেবে বিশেষ পরিচিত। এদের মধ্যে ঝুপমা নামে পরিচিত নিমগাছটি পূজিত হয় কালী মায়ের রূপে। এই গাছটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর। কথিত আছে, একসময় এই জায়গায় গভীর জঙ্গল ছিল এবং সেই জঙ্গলে বাস করত একদল বর্গি-দস্যু। সেই সময়ে নিজেদের রক্ষার জন্য এই নিমগাছের নিচে তারা কালীপুজো করত। দস্যুরা কালী মায়ের প্রতি বিশেষ ভক্তি দেখিয়ে ঝুপমা রূপে গাছটির পূজো শুরু করেছিল। তখন থেকেই কাটোয়ার মানুষ ঝুপমা নামে নিমগাছটিকে দেবীজ্ঞান করে পূজো করে আসছে। আজও ঝুপমা গাছটির নিচে পূজো করা হয়, ফুল-মালা, খড়গ, এবং মুকুটে সাজানো হয় নিমগাছটিকে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই নিমগাছটি খুবই জাগ্রত এবং এর পূজো করলে মা কালীর আশীর্বাদ মেলে।
পাশাপাশি ক্ষেপিমা ও পাকুরতলা কালীর পূজোও বিশেষ আকর্ষণীয়। স্থানীয় এক ভক্ত অমরেশ মজুমদার বলেন, “কাটোয়ার এই পূজো শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের আবেগের সঙ্গে মিশে আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে আস্থা রেখে এই পূজো শুরু করেছিলেন, আজও সেই আস্থার আলোকে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।”কাটোয়ার মা ন’ঠাকুর পূজো এলাকায় এক গভীর সামাজিক সংযোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে দীপান্বিতা কালীপুজোয় মা ন’ঠাকুরের মন্দিরে যে উৎসব পালিত হয়, তা স্থানীয়দের জন্য একটি বিশাল উৎসব হয়ে ওঠে। শুধু শহরের বাসিন্দারাই নয়, বরং শহরের বাইরের মানুষও এই পূজো দেখতে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এই পূজো করলে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় থাকে।পুজোর দিনগুলোতে মন্দির চত্বর সেজে ওঠে রঙিন আলোয়। ক্ষেপিমা, ঝুপমা, পাকুরতলা এবং তারা মায়ের মূর্তি রং-বেরঙের আলোর ঝলকে মায়াময় হয়ে ওঠে। প্রতিটি মন্দিরে বিশেষ আয়োজন এবং উপচে পড়া ভিড় দর্শকদের আকর্ষণ করে।
শহরের প্রাচীন বাসিন্দা আনন্দী দেবী বলেন, “এই পূজো আমাদের শিকড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা স্মৃতি। সময়ের সঙ্গে সব কিছু বদলে গেছে, কিন্তু মা ন’ঠাকুরের পূজো আজও সেই জায়গায় রয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি ঐতিহ্যের প্রতীক।” এই পূজো শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধরে রাখার নয়, বরং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাটোয়ার প্রাচীন ইতিহাসকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ারও একটি সুযোগ।কাটোয়ার এই পূজো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু। পুজোর সময় দোকানদারদের বিক্রি বেড়ে যায়, এবং এ সময় শহরের প্রায় প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উৎসবের আনন্দে অংশগ্রহণ করে। শুধু স্থানীয় নয়, পর্যটকেরাও এই সময়ে কাটোয়ায় আসেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
এই প্রাচীন পূজোর সঙ্গে কাটোয়ার জনজীবন নিবিড়ভাবে জড়িত, এবং এই পূজোর মাধ্যমে ধর্মীয় একতার বোধকে নতুন করে উজ্জীবিত করে তোলে। স্থানীয়দের মতে, “মা ন’ঠাকুরের পুজো আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখে।”