Wednesday, April 9, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গপূর্ব মেদিনীপুরে ডিআই অফিসে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ

পূর্ব মেদিনীপুরে ডিআই অফিসে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ

Protesters lock DI office in East Midnapore: পূর্ব মেদিনীপুরের শিক্ষা মহলে যেন এক বিস্ফোরণ ঘটেছে, বুধবার সকাল থেকে জেলার মানিকতলার ডিআই অফিসে দেখা গেল এক অভিনব প্রতিবাদের ছবি—চাকরি হারা শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা নিজেরাই তালা লাগিয়ে দিলেন সরকারি দপ্তরের দরজায়! প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো জন চাকরি হারা পরীক্ষার্থীর বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়ল গোটা প্রশাসনিক অফিস। তাদের দাবি একটাই—যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতেই হবে, এবং যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীরা নিপাটভাবে যোগ্য হয়েও শুধুমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতিতে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের ফের নিয়োগ করতে হবে। বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আলোচনার মাধ্যমে একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছতে চেয়েছিলেন, সেই বৈঠকের প্রস্তাব তারা মানেন না। তাদের মতে, সেই বৈঠকে বাস্তব সমস্যার প্রতিফলন ঘটেনি এবং সেখান থেকে কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। চাকরি হারানো শিক্ষকরা ক্ষোভের সুরে বলেন, “দিদি বলেছিলেন, ন্যায্য বিচার হবে, কিন্তু আজও আমরা বিচার পাইনি। স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির জেরেই আজ আমরা রাস্তায়।” জানা গেছে, যারা তালা লাগিয়েছেন তারা সবাই ২০১৪, ২০১৬ সালের টেট উত্তীর্ণ এবং মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও নিয়োগে বাদ পড়েছেন অথবা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলেও পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি বাতিল হয়েছে। কিছু প্রার্থী বলছেন, “যখন চাকরিতে ঢুকেছিলাম তখন কারো সুপারিশে নয়, আমরা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলাম। এখন দুর্নীতির দায়ে আমাদের কেন বলি হতে হবে?” সকাল থেকেই

মানিকতলা ডিআই অফিসের সামনে একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে পুলিশ মোতায়েন, তবে এখনো পর্যন্ত ডিআই নিজে অফিসে উপস্থিত হননি। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল অফিসে প্রবেশ করতে চাইলেও তালা লাগানো থাকায় কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি। কিছু মানুষ চোখের জলে বলেন, “ঘরে বাচ্চা আছে, পরিবার আছে, অথচ দু’বেলা খাওয়ার উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা কি করব?” এই আন্দোলন কেবল একটি জেলার সীমায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তা ধীরে ধীরে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া—সব জায়গা থেকেই একই ধরণের অভিযোগ উঠছে এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। এর পাশাপাশি, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “সরকার শিক্ষাকে নিয়ে ছেলেখেলা করছে। যাদের চাকরি দেওয়া উচিত, তাদের বাদ দিয়ে তোষণের রাজনীতি করছে।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “দিদির বৈঠক মানেই নাটক। শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিলেই শান্তি ফিরবে।” যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে শিক্ষামন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। কিন্তু আইনি বাধা থাকলে আমরা কিছু করতে পারি না।” এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পুরো এলাকাজুড়ে নজরদারি চালাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। একজন চাকরি হারা প্রার্থী বলেন, “এটা শুধুমাত্র একটা চাকরির বিষয় নয়, এটা আমাদের সম্মানের প্রশ্ন। আমরা পেশাদার শিক্ষক, আমাদের রাস্তায় বসে থাকতে বাধ্য করবেন না।” দীর্ঘদিনের এই টানাপোড়েনে যেভাবে রাজ্যের তরুণ শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, তাতে ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষত, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এই আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে আরও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে বলেই মত বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “যদি ওরা পরীক্ষায় পাস করে থাকে তাহলে চাকরি তো পেতেই হবে।” আবার কেউ কেউ মনে করছেন, “সরকারকেও তো আইনের পথ মেনে চলতে হবে, শুধু বিক্ষোভে কিছু হবে না।” কিন্তু এই পুরো কাহিনির মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তা হল—একজন তরুণ শিক্ষকের জীবনে যখন আশা নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন থাকে, তখন সেই স্বপ্ন যদি বারবার ভেঙে পড়ে, তখন সে কার ওপর ভরসা রাখবে? কীভাবে আবার নতুন করে শুরু করবে? এখন শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, গোটা বাংলা তাকিয়ে আছে এই আন্দোলনের পরিণতির দিকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments