Protester beaten over sale of government land in Durgapur : দুর্গাপুরের গোপালমাঠ সংলগ্ন বনগ্রাম এলাকায় ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যেখানে সরকারি জমি বিক্রির প্রতিবাদ করাই কাল হয়ে দাঁড়াল ছোট্টু বাউরীর জন্য। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পড়ে থাকা জমি প্লট করে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছিলেন এবং সেই জমিতে বাড়িও তৈরি হচ্ছিল। ছোট্টু বাউরী এই বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করতেই তাঁর ওপর চড়াও হয় একদল দুষ্কৃতী। শুধু তাই নয়, ছোট্টুর স্ত্রী যখন স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে যান, তখন তাকেও নিস্তার দেওয়া হয়নি, তাঁর উপরও হামলা হয়। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় ছোট্টু দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এবং আঙুল উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে।
রবিবার দুপুরে ছোট্টু বাউরী তাঁর বাড়িতেই ছিলেন, হঠাৎই কয়েকজন ব্যক্তি দলবল নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। অভিযোগ, তাঁকে ঘর থেকে টেনে বের করে এনে মারধর করা হয়, যার ফলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁর স্ত্রী যখন স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তখন তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে প্রতিবেশীরা এসে ছোট্টুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ঘটনার পরই দুর্গাপুর থানায় মেইল মারফত লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।ছোট্টু বাউরী বলেন, “আমি যখন দেখলাম যে সরকারি জমি অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে, তখন আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু তারই জন্য আমার ওপর চড়াও হলো তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মাধব, জয়ন্ত সহ বেশ কয়েকজন এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। তারা প্রত্যেকেই শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত।”অন্যদিকে, অভিযুক্তদের দাবি, “আমরা সেই জমিতে আমাদের বাড়ি বানাচ্ছিলাম, ছোট্টু এসে আমাদের কাজে বাধা দেয় এবং আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমরা প্রতিবাদ করলে সে-ই আমাদের ওপর হামলা চালায়। এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যে অভিযোগ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার এই জমি অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। কিছু অসাধু ব্যক্তি এই জমি প্লট করে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছে, যার কোনো বৈধ নথি নেই। এমনকি, এই জমির পাশেই একটি পুকুরও রয়েছে, যা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এখন সেখানে দখলদারির চেষ্টা চলছে। এই ঘটনার কথা প্রশাসনের কাছে আগেও জানানো হয়েছিল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি এখনই প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের বেআইনি জমি বিক্রি আরও বাড়বে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সরকারি জমি বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এখানে যারা প্লট কেটে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”অন্যদিকে, আরেকজন বলেন, “এই ধরনের জমি কেনার আগে মানুষকে সতর্ক হতে হবে।
কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জমি কেনা মানে ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ উঠতেই দুর্গাপুরের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। দলীয় নেতাদের বক্তব্য, “আমাদের দলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিবাদের বিষয়।”তবে বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলকে দায়ী করেছে। বিজেপির এক স্থানীয় নেতা বলেন, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এখন সরকারি জমি বিক্রি করেও সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছে। প্রশাসন সব দেখেও চুপ করে আছে, কারণ এই কাজে তাদেরও মদত রয়েছে।”অন্যদিকে, দুর্গাপুর থানার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।